কবির কাম্য দূষণমুক্ত পরিবেশ
‘কয়েকটি কবিতা’ কাব্যগ্রন্থের অন্তর্গত ‘মহুয়ার দেশ’কবিতাটি কোভিদ সমর সেনের অধিকাংশ কবিতার মেজাজ থেকে অনেকটাই আলাদা। নগর জীবনের একঘেয়েমি ক্লান্তি থেকে মুক্তি পেতে কবির মন যে মহুয়ার দেশ আশ্রয় খুজেছে, সে দেশ অনাবিল পরিচ্ছন্দ্যতার স্বর্গরাজ্য। অনেক দূরেই সেই ‘মেঘ- মদির’ মহুয়ার দেশ কবির কাছে চির আকর্ষণীয়। সেখানে ‘দেবদারুর দীর্ঘ রহস্য’ ‘পথের দু ধারে ছায়া ফেলে’ ‘সমস্তক্ষণ’। সেখানে ‘দূর সমুদ্রের দীর্ঘশ্বাস’ ‘রাত্রে নির্জন নিঃসঙ্গ তাকে আলোড়িত করে’ । দূষণমুক্ত প্রকৃতির এই স্নেহময় আবেশ ক্লান্ত ও অবসন্ন শহরে কবির কাছে তাই কাঙ্খিত হয়ে দাঁড়ায়।
প্রকৃতিলগ্ন জীবন
কালের পরিবর্তনের সঙ্গে কবির সেই পরমাকাঙ্ক্ষিত মহুয়ার দেশ উপর নেমে আসে ধনতন্ত্রের থাবা। প্রগতির হিংস্রতা থেকে রক্ষা পায়না উদার, উন্মুক্ত প্রকৃতি। মহুয়ার দেশ ও ‘নিবিড় অন্ধকারে’ শোনা যাই বেমানান কয়লা খনির ‘গভীর, বিশাল শব্দ’ । নাগরিক জীবনের দূষিত ক্লান্তির মতোই কবির কাছে সে ‘শব্দ’ ‘অসহ্য’ ঠেকে। জীবন যন্ত্রণা, জীবনযাপনের ক্লান্তি এ সমস্ত কিছুই আসলে কোন নির্দিষ্ট ভৌগোলিক সীমায় আবদ্ধ নয়। তাই মহুয়ার দেশের ‘শিশিরে-ভেজা সবুজ সকালে’-ও মানুষের শরীরে থাকে ‘ধুলোর কলঙ্ক’ । মহুয়ার দেশকে খুব কাছ থেকে দেখে কবি উপলব্ধি করেন সেখানকার প্রকৃতি লগ্ন জীবনে ক্লান্তিহীন একমাত্রিক পরিতৃপ্তি ছাড়াও রয়েছে পুঁজিবাদী সভ্যতার আগ্রাসন এবং মানসিক সত্তার অবক্ষয়। প্রগতির কাছে প্রকৃতির এই অসভ্যতা আত্মসমর্পণ প্রতিষ্ঠা করে মহুয়ার দেশ বেঁচে থাকতে পারে কবির স্বপ্নে আর সত্তায়।
দ্বাদশ শ্রেণির বাংলা সমস্ত অধ্যায় অনুযায়ী তার সব প্রশ্নের উত্তর