সূচনা
মিশর দেশের উত্তর-পূর্ব দিক ইংরেজ ও ফরাসিদের তত্ত্বা বাঁধনে খাল করা একটি হলো সুয়েজ খাল। ১৯৫৯ খ্রিস্টাব্দে এই খাল খনন শুরু ১৯৫৯ খ্রিস্টাব্দে এই খাল খনন শুরু হলেও ১৯৬৯ থেকে নেটে বাণিজ্যিকভাবে যাহা চলাচল শুরু হয়। ইউনিভার্সাল সুয়েজ ক্যআনআল কোম্পানি নামে এক সংস্থাকে একটি চুক্তির ভিত্তিতে ৯৯ বছরের মেয়াদ খালটি পরিচালনার দায়িত্ব দেওয়া হল। কিন্তু মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ার ১৯৫৬ খ্রিস্টাব্দে ২৬ জানুয়ারি মিশরে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি গামাল আব্দেল নাসের এক ঘোষণা আর মাধ্যমিক সুয়েজ খাল ও সুয়েজ ক্যআনআল কোম্পানি দুটোকে জাতীয়করণ করে নেন। ফলের সুয়েজ খাল কে কেন্দ্র করে এক সমস্যা তৈরি করে। কৃষ্ণ জুড়ে এই সমস্যাকেই সুয়েজ সংকট বোঝায়।
সুয়েজ সংকটের কারণ
১. ব্রিটেন ও ফ্রান্সের দায়িত্ব
আরব ইজড়াইল দন্দ চলাকালে ব্রিটেন ও ফ্রান্স ইসরায়েলকে অস্ত্র সরবাহের সিদ্ধান্ত নিলে আরব দেশগুলি ক্ষুব্ধ হয় এবং নাসেরের সঙ্গে পাশ্চাত্য দেশগুলি মনোমালিন্য শুরু হয়। আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের ক্ষেত্রে ব্রিটেন ও ফ্রান্সি সুয়েজ খালের ওপর সব থেকে বেশি নির্ভরশীল ছিল। মার্কিন বিদেশ মন্ত্রী ডালেস যখন সুয়েজ খাল ব্যবহারকারী দেশগুলোকে নিয়ে এক সংস্থা গঠনের প্রস্তাব দেন তখন ব্রিটেন ও ফ্রান্স সে প্রস্তাবে সারা দেননি। পরবর্তীকালে জাতিপুঞ্জের মিশর এই প্রস্তাব তুলে ধরে ব্রিটেন ও ফ্রান্স সুয়েজ খালের উপর আন্তর্জাতিক নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার দাবি জানায়, যা নাসেরের পক্ষে মেনে নেওয়া সম্ভব ছিল না।
২. আসওয়ান বাঁধ নির্মাণ প্রকল্প
নাসির চেয়েছিলেন মিশরের আর্থিক উন্নয়নের জন্য নীলনদের ওপর আসওয়ান বাঁধ নির্মাণ করতেন। কেননা ওই বাঁধের সাহায্যে আট লক্ষ ৬০ হাজার হেক্টর জমিতে জল সেচ করে সেগুলি আবাদি জমিতে পরিণত করা যাবে। আবার এই বাঁধের জল ধরা থেকে যে বিদ্যুৎ উৎপন্ন হবে তা শিল্প উন্নয়নের সাহায্য করবে। এই নির্মাণ প্রকল্পের মোট খরচ ধরা হয়েছিল ১৪ হাজার মিলিয়ন ডলার। ইংল্যান্ড, আমেরিকা ও বিশ্ব ব্যাংক মিলিতভাবে এই প্রকল্পের জন্য ৭০ মিলিয়ন ডলার ঋণ দিতে রাজিও হয়। কিন্তু এক বছর আলোচনা চলার পর অ্যামেরিকা আবৃত্তিনের প্ররোচনায় বিশ্বব্যাংক ঋণ প্রস্তাব বাতিল করে দিলে নাসের প্রচন্ড ক্ষুব্ধ হন।
৩. নাসেরের প্রাশ্চাত্য বিরোধী মনোভাব
নাচের কখনোই চাননি ইজিপট মিশরে ইংল্যান্ডের সৈন্যরা অবস্থান করুক। তাই তিনি ইংল্যান্ডকে চাপে রাখার জন্য সোভিয়েতের সামরিক শক্তি সাহায্য জরুরী বলে মনে করেন। এই লক্ষ্যে তিনি একসঙ্গে জোট নিরপেক্ষ নীতি অবলম্বন করেন ও লিঙ্গ মার্কিন গোষ্ঠীর বিরোধিতা শুরু করেন। পাশ পাশি মাসে তিনি কমিউনিস্ট চীনকে ও স্বীকৃতি জানান। নাসেরের এই আচরণে ক্ষুব্দ হয় ব্রিটেন ও ফ্রান্স।
৪. সুয়েজ খাল জাতীয়করণ
ক্ষুব্দ মাসের সুয়েজ খাল এবং সুয়েজ ক্যানাল কোম্পানির জাতীয়করণ করেন ১৯৯৬ খ্রিস্টাব্দে ২৬ জুলুয়ার এবং ঘোষণা করেন যে,
(১) এই সুয়েজ খাল থেকে আদায় করা অর্থ আসওয়ান বাঁধ নির্মাণে খরচ করা হবে।
(২) কোম্পানির বিদেশি অংশীদারদের প্রচলিত বাজার দর অনুযায়ী ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে।
(৩) আন্তর্জাতিক যোগ সূত্র হিসেবে সব দেশে জাহাজেই জলপথ ব্যবহার করতে পারবে। এ ঠিক তিন মাস পরে উনিশে অক্টোবর ১৯৯৬ খ্রিস্টাব্দের ব্রিটেন ও ফ্রান্সের গোপন প্ররোচনায় ইজরায়েল মিশর আক্রমণ করে।
সুয়েজ সংকট এর গুরুত্ব ও ফলাফল
« গুরুত্ব
১৯৯৬ খ্রিস্টাব্দের সুয়েজ সংকট আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে এক অতি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। এর গুরুত্ব ও ফলাফল গুলি হল –
১. আরব দুনিয়ার পশ্চিমে বিদ্বেষ
প্রথম আরব ই জ
প্রথম আরব-ইজরায়েলে যুদ্ধে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সমেত পশ্চিম শক্তিগুলি নিজেদের স্বার্থই নানাভাবে ইজরাইলকে সাহায্য করেছিল। এমতাবস্থায় সুয়েজ সংকটকে কেন্দ্র করে মিশরের ওপর ইঙ্গ-ফরাসি আক্রমণ শুরু হলে মিশর সহ গোটা আরব দুনিয়ায় পশ্চিম বিরোধী মনোভাবের সৃষ্টি হয়।
২. সুদৃঢ় আরব ঐক্য
পশ্চিম বিরোধ মনোভাবের আরবদের আরো সংহত করে তোলে। তাদের ঐক্য আরো দৃঢ় হয়। মিশর ও সিরিয়া ঐক্যবদ্ধ হয়ে গঠিত হয় সংযুক্ত আরব প্রজাতন্ত্র। নাসের হন তার প্রথম রাষ্ট্রপতি।
৩. নাসেরের জনপ্রিয়তা
আরব জাতীয়তাবাদ শেষ পর্যন্ত জয়যুক্ত হলে নাসেরের আন্তর্জাতিক মর্যাদা বৃদ্ধি পায়। আরব জাতীয়তাবাদীদের কাছে নাসেরের বীরের সম্মান লাভ করেন। তিনি আধুনিক সালাদিন উপাধিতে ভূষিত হন। মিশর ও সিরিয়া দুটি দেশ ঐক্যবদ্ধ হয়ে ১৯৯৮ খ্রিস্টাব্দে সংযুক্ত আরব প্রজাতন্ত্র গঠিত হয়। এই প্রজাতন্ত্রের প্রথম রাষ্ট্রপতি হন নাসের। নাসির জোট নিরপেক্ষ আন্দোলনের অন্যতম স্তম্ভে পরিণত হন।
৪. ব্রিটেন ও ফ্রান্সের মর্যাদা হ্রাস
সুয়েজ সংকটের পরিণতিতে যে দ্বিতীয় আরও ইজড়াইল দ্বন্দ্ব বাধে তার জেরে মধ্যপ্রাচ্যে ব্রিটেন ও ফ্রান্সের কর্তৃত্বের অবসান ঘটে। ব্রিটেনের আন্তর্জাতিক মর্যাদা হ্রাস পাই। খোদ ব্রিটেন এই বিরোধিতা জেরে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী অ্যান্টনি ইবেন ১৯৫৭ খ্রিস্টাব্দে ৯ জানুয়ারি পদত্যাগ করতে বাধ্য হন। ফরাসি উপনিবেশ আলজেরিয়ায় ফ্রান্স বিরোধী মুক্তি সংগ্রাম তীব্র রূপ ধারণ করে এবং শেষ পর্যন্ত আলজেরিয়া স্বাধীনতা ফিরে পায়।
৫. শত্রুতা বৃদ্ধি
সুয়েজ সংকট মিশন ও ইজারয়েলের মধ্যে শত্রুতাকে চরণে নিয়ে যায়। ইজরাইলকে কেন্দ্র করে মধ্যপ্রাচ্যের রাজনীতি আরও জটিল হয়ে পড়ে।
৬. পশ্চিমী শক্তিবর্গের মতভেদ
সুয়েজ সংকর পশ্চিমে দুনিয়ায় ঐক্যে ফাটল ধরায়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র মিশরে ইঙ্গ-ফরাসি আক্রমণকে সমর্থন করেন নি।
৭. দুই বৃহৎ শক্তির ঐক্যেমত
এই সংকটকে কেন্দ্র করেই আমেরিকা ও সোভিয়েত ইউনিয়ন এই সংকটকে কেন্দ্র করেই আমেরিকা ও সোভিয়েত ইউনিয়ন একমত হয়ে ব্রিটেন, ফ্রান্স ও ইজারাইলকে যুদ্ধ বিরোধী ও সৈন্য অপসারণ করতে বাধ্য করেছিল। ঠান্ডা লড়াইয়ে যুদ্ধে এর কম ঘটনা খুব বেশি ঘটেনি।
৮. সোভিয়েতের জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি
সুয়েজ সংকট থেকে পুরো ফায়দা তোলে সোভিয়ে দিয়ে ইউনিয়ন। আরব-ইজরয়েল সংঘর্ষে নৈতিকভাবে আরবদের পাশে থাকায় আরব দুনিয়ায় সোভিয়েদ ইউনিয়ন জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিল।
৯. মিশরের কর্তৃত্ব
মিশর কর্তৃত্ব সুয়েজ খাল জাতীয়করণকে আন্তর্জাতিক দুনিয়ায় স্বীকৃতি দিলে সুয়েজ খালের ওপর মিশরের কর্তৃত্ব দৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়।
১০. ইজরায়েলর মার্কিন নির্ভরতা বৃদ্ধি
সুয়েজ সংকটের জেনে সংঘটিত দ্বিতীয় আরব ইজরায়েলে যুদ্ধে ইজরোয়েলের আর্থিক ও সামরিক দিক থেকে প্রচন্ড ক্ষতিগ্রস্ত হয়।। এই ক্ষতিপূরণের জন্য ইজরায়লে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বাড়ে।