কোঠারি কমিশনের সুপারিশের পরিপ্রেক্ষিতে উচ্চ শিক্ষার উদ্দেশ্য।

নিয়ন্ত্রিত শিক্ষা ব্যবস্থার সর্বশেষ পর্যায়ে উচ্চশিক্ষা। সাধারণত উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষার পরেই শুরু হয় উচ্চ শিক্ষা। বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বারা পরিচালিত শিক্ষা ব্যবস্থায়ী হল উচ্চশিক্ষা ব্যবস্থা।

কলেজ বা মহাবিদ্যালয় থেকে শুরু করে উচ্চতর স্তর পর্যন্ত প্রচলিত শিক্ষা ব্যবস্থাকে উচ্চ শিক্ষা বলা হয়। শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন কাজের পারদর্শিতা হওয়ার জন্য শিক্ষা দেওয়া হয়।

উচ্চশিক্ষা পরিধি অন্তত ব্যাপক। বর্তমানে শুধু মহাবিদ্যালয় আর বিশ্ববিদ্যালয় নয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের সমকক্ষ বিভিন্ন উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে দ্বারা নিয়ন্ত্রিত শিক্ষাকেও উচ্চ শিক্ষার স্তর হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

Table of Contents

কোঠারি কমিশনের সুপারিশের পরিপ্রেক্ষিতে উচ্চ শিক্ষার উদ্দেশ্য

কোঠারি কমিশনের সুপারিশের পরিপ্রেক্ষিতে উচ্চ শিক্ষার বিভিন্ন উদ্দেশ্য গুলি পয়েন্ট আকারের নিচে আলোচনা করলাম –

১ জাতীয় চেতনা জাগ্রত করা

উচ্চশিক্ষার একটি গুরুত্বপূর্ণ উদ্দেশ্য হলো শিক্ষার্থীর মধ্যে জাত ও চেতনা জাগ্রত করা। উচ্চ শিক্ষার মাধ্যমে শিক্ষার্থী জাতীয় জীবনের নতুন ও পুরাতন চেতনার মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা করে দেশের অগ্রগতি ঘটাতে সক্ষম করে তোলে।

২ গণতান্ত্রিক চেতনা জাগ্রত করা

উচ্চ শিক্ষার উদ্দেশ্য হলো শিক্ষার্থীর মধ্যে গণতান্ত্রিক চেতনা জাগ্রত করা। পৃথিবীর অনেক দেশেই আজ গণতান্ত্রিক আদর্শ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। গণতন্ত্রের মূল বৈশিষ্ট্য হল সাম্য, স্বাধীনতা, ন্যায়বিচার ইত্যাদি। ধর্ম, বর্ণ, জাতি নির্বিশেষে সমাজের সকল ব্যক্তিকে সমান সুযোগ সুবিধা দান হল গণতন্ত্রের মূল আদর্শ।

৩ সুপ্ত প্রতিভার বিকাশ আদনান

শিক্ষার্থীর ব্যক্তিগত সুপ্ত প্রতিভার বিকাশ সাধন করা উচ্চ শিক্ষার একটি অন্যতম উদ্দেশ্য। উন্নত শিক্ষাগত ও পেশাগত শিক্ষার ব্যবস্থা করে উচ্চ শিক্ষার্থীদের প্রতিভা বিকাশের সুযোগ দান করা হয়ে থাকে।

৪ সামাজিক বিকাশ

শুধুমাত্র শিক্ষার্থীর প্রতিভার বিকাশ নয়, তার সামাজিক গুণাবলীর বিকাশ ও উচ্চ শিক্ষার একটি অন্যতম উদ্দেশ্য। উন্নত সামাজিক চেতনা ও মূল্যবোধের বিকাশ ঘটিয়ে শিক্ষার্থীকে সমাজের একজন দায়িত্ববান ও স্বনির্ভরশীল নাগরিক হিসেবে গড়ে তোলা উচ্চ শিক্ষার প্রধান কাজ।

৫ বিজ্ঞানের প্রযুক্তিবিদ্যার উন্নতি

প্রধান উদ্দেশ্য হল কৃষি, শিল্প, চিকিৎসা শাস্ত্র, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিদ্যার উন্নতি প্রভৃতি। বৃত্তি ও পেশাগত বিষয়ে উপযুক্ত প্রশিক্ষণ দিয়ে শিক্ষার্থীদের বিশেষ বিশেষজ্ঞ তৈরি করা।

৬ গবেষণা ক্ষেত্রে সম্প্রসারণ ও মান উন্নয়ন

উচ্চতর শিক্ষা ও গবেষণা ক্ষেত্রের সম্প্রসারণ ও মান উন্নয়ন উচ্চশিক্ষার একটি অন্যতম উদ্দেশ্য। নতুন নতুন জ্ঞানের জন্য গবেষণার সম্প্রসারণ ও মান উন্নয়নের জন্য উচ্চশিক্ষা প্রয়োজন।

৭ বয়স্ক শিক্ষার সম্প্রসারণ

বয়স্ক শিক্ষার সম্প্রসারণই হলো উচ্চ শিক্ষার প্রধান উদ্দেশ্য। কোনো দেশে অগ্রগতি নির্ভর করে সেই দেশের জনসাধারণের উপর। তাই উচ্চশিক্ষার কাজ হল কোন গণসংরক্ষতা ও বয়স্ক শিক্ষার প্রসারের ও উন্নয়নের জন্য উপযুক্ত পরিকল্পনা রচনা করা।

৮ আন্তর্জাতিক চেতনা জাগরণ করা

শিক্ষার্থীর মধ্যে আন্তর্জাতিক চেতনা জাগ্রত করা উচ্চশিক্ষায় একটি গুরুত্বপূর্ণ উদ্দেশ্য। বর্তমানে সমস্যা বহুল পারমাণবিক যুগে আন্তর্জাতিক ভাতৃত্ববোধ ও বন্ধুত্ব স্থাপন সম্পর্কে খুব প্রয়োজন রয়েছে।

৯ চাহিদা অনুসারে উচ্চশিক্ষার প্রসার

দ্রুত পরিবর্তনশীল সমাজের প্রয়োজন ও ক্রমবর্ধমান ব্যক্তির চাহিদা অনুসারে উচ্চশিক্ষার প্রসার ও সুযোগ সুবিধা বৃদ্ধি করা উচ্চশিক্ষার একটি অন্যতম উদ্দেশ্য। বর্তমানে তাই ডাকযোগে শিক্ষা প্রবর্তন করা হয়েছে এবং মুক্ত বিদ্যালয় গড়ে তোলা হয়েছে।

অবশেষে কমিশন উপযুক্ত যে সকল লক্ষ্য গুলির কথা বলেছেন সেগুলোর কার্যকরী বিজ্ঞানের জন্য উচ্চশিক্ষার মানের পরিবর্তনের উদ্দেশ্যে আরো কতগুলো সুপারিশ করেছেন তা নিম্নে আলোচনা করা হলো

১ বিশ্ববিদ্যালয়গুলির দায়িত্ব বৃদ্ধি

বিশ্ববিদ্যালয় গুলিতে শিক্ষার উন্নতির জন্য যে সকল দায়িত্ব রয়েছে সেগুলি ব্যতীত আরো কিছু দায়িত্ব নিতে হবে।

২ বিদ্যালয়ের গুণগত মান উন্নয়ন

বিদ্যালয় গুলিকে বিদ্যালয়ের গুণগত মান উন্নয়নের বিশেষভাবে সাহায্য করতে হবে।

৩ উচ্চশিক্ষার কেন্দ্র স্থাপন

অতি উচ্চমানের বিশেষ কয়েকটি উচ্চ শিক্ষার কেন্দ্র স্থাপন করতে হবে, যেগুলি পৃথিবীর যেকোনো দেশের উচ্চ মালের বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মানের হবে। এগুলি হবে ভারতীয় শিক্ষার একমাত্র কেন্দ্রবিন্দু।

৪ প্রধান বিশ্ববিদ্যালয়

প্রধান বিশ্ববিদ্যালয় অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজগুলি প্রয়োজনীয় চাহিদা মেটাবে। প্রধান বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রতিভাবান শিক্ষার্থীরা যাতে শিক্ষকতা পেশায় নিযুক্ত হয় তার জন্য সবরকম প্রচেষ্টা করতে হবে।

৫ উচ্চশিক্ষার শিক্ষামূলক ব্যবস্থা

উচ্চশিক্ষার নিয়মিত ক্লাস, পরীক্ষাগারের কাজের সময় কমিয়ে সেই সময় শিক্ষার্থীদের স্বাধীনভাবে পড়ার সুযোগ করে দেওয়া। উপদেষ্টা মন্ডলি দ্বারা নির্ধারিত পাঠ্যসূচি অনুসারে পঠন, প্রবন্ধ রচনা, সমস্যার সমাধান, ছোট ছোট প্রযুক্তি নিয়ে গবেষণা করা ও গ্রন্থাগারের তথ্য অনুসরণের কাজের সময় ব্যয় করা।

৬ আদর্শ পাঠাগার তৈরি

কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয় গুলিতে গ্রন্থ সমৃদ্ধ আদর্শ পাঠাগার গড়ে তোলা একান্ত প্রয়োজন।

৭ মৌলিক চিন্তায় উৎসাহ দান

শিক্ষার্থীদের যান্ত্রিকভাবে মুখস্ত করার পরিবর্তে সব বিষয়ে মৌলিক চিন্তায় যাতে বিকাশ ঘটে, সেই দিকে বেশি করে নজর দিতে হবে।

৮ উচ্চশিক্ষার শিক্ষা পদ্ধতি

উচ্চশিক্ষার শিক্ষাপদ্ধতি বিষয়ে কোনো সময়ে বিশেষভাবে চিন্তা ভাবনা করা হয়নি। তাই UGC এই বিষয়ে অনুসন্ধানের জন্য একটি কমিটি গঠন করবেন।

৯ শিক্ষক শিক্ষণ প্রতিষ্ঠানের দায়িত্ব

শিক্ষক শিক্ষণ প্রতিষ্ঠান রয়েছে সেগুলি শুধুমাত্র বিদ্যালয় শিক্ষা বিষয় নিযুক্ত না থেকে কলেজ শিক্ষার উন্নয়ন সম্পর্কেও চিন্তাভাবনা করবে।

১০ বিশ্ববিদ্যালয় স্তরে শিক্ষার মাধ্যম হবে আঞ্চলিক ভাষা, ১০ বছরের জন্য একটি কর্মসূচি গ্রহণ করতে হবে। স্নাতক শ্রেণীতে আঞ্চলিক ভাষায় পড়ানোর ব্যবস্থা করতে হবে, কিন্তু স্নাতকোওর শ্রেণীতে শিক্ষার মাধ্যম হবে ইংরেজি। অধ্যাপকরা আঞ্চলিক এবং ইংরেজি দুই ভাষাতেই দক্ষ হবেন।

ডিগ্রি কোষের প্রথম বছরে ইংরেজি ঐচ্ছিক ভাষারূপে শিক্ষার্থীদের শেখানোর সুযোগ থাকবে।

১১ পরামর্শ ও আলোচনা সভার আয়োজন।

কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় গুলিতে ছাত্র অসন্তোষ ও শৃঙ্খলাধীনতা শিক্ষা ব্যবস্থার একটি বড় সমস্যা। এই অবস্থার পরিবর্তন ও প্রশাসনিক ত্রুটি দূরীকরণের জন্য বিশেষভাবে পরামর্শ ও আলোচনা সভার আয়োজন করতে হবে।

এই আলোচনা শিক্ষার্থীদের অসুবিধা নিয়ে যেমন আলোচনা করবে তেমনি সুবিধার দেওয়ার ব্যাপারেও বেশি নজর দিতে হবে। বিশ্ব বিদ্যালয়ে জীবনে শিক্ষক শিক্ষার্থী এবং ব্যবস্থাপনা করা একই গোষ্ঠিত হবেন।

১২ কৃষি, ইঞ্জিনিয়ারিং, চিকিৎসা শিক্ষার সুযোগ বৃদ্ধি

উচ্চ শিক্ষার ভর্তি সমস্যা সমাধানে কমিশনের কৃষি, ইঞ্জিনিয়ারিং, চিকিৎসা প্রকৃতি ক্ষেত্রে সুযোগ বৃদ্ধি করার কথা বলেছেন।

১৩ বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি

উচ্চশিক্ষায় ভর্তির ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয় কে পরামর্শ দেওয়ার জন্য দেশের প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি করে বোর্ড থাকবে।

১৪ আংশিক সময় শিক্ষা

কমিশন উচ্চশিক্ষা প্রসারের জন্য আংশিক সময়ের শিক্ষার কথা বলেছেন। যেমন – সান্ধ্যা ক্লাস, ডাকযোগের শিক্ষা প্রভৃতি সুযোগ বৃদ্ধি করে বিজ্ঞান ও কারিগরি শিক্ষার প্রসার করাতে হবে।

১৫ পাঠক্রম

বিশ্ববিদ্যালয় গুলি তাদের নিজেদের মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক বজায় রেখে পাঠক্রম তৈরি করবেন। গবেষণার ক্ষেত্রে বিনিময়ের ধারাকে বজায় রেখে চলতে হবে।

১৬ পরিচালনা

বিশ্ববিদ্যালয় গুলি পরিচালনার কৌশল হবে খুবই অতি সাধারণ। উচ্চ শিক্ষার লক্ষ্যকে সামনে রেখে কাজ করতে হবে। কমিশন বলেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগ গুলি পারস্পরিক সহযোগিতা ও স্বাধীনতার ভিত্তিতে কাজ করবে।

দ্বাদশ শ্রেণী শিক্ষাবিজ্ঞানের (education) সব প্রশ্ন উত্তর

Leave a Comment