“শিক্ষা হল একটি বহুমুখী প্রক্রিয়া”—উক্তিটি ব্যাখ্যা করাে। শিক্ষাকে একটি স্বয়ংক্রিয় প্রক্রিয়া বলা কতখানি যুক্তিযুক্ত তা লেখাে।

শিক্ষা-একটি বহুমুখী প্রক্রিয়া

শিক্ষা একটি প্রক্রিয়া, এ সম্পর্কে কোনাে প্রশ্ন না থাকলেও শিক্ষাপ্রক্রিয়া একমুখী, দ্বিমুখী না বছুমুখী এ প্রশ্ন বহুদিনের। বর্তমানে শিক্ষাকে একটি বহুমুখী প্রক্রিয়া বলে বিবেচনা করা হয়।

[1] শিক্ষা একমুখী প্রক্রিয়া নয় : সংকীর্ণ অর্থে শিক্ষাকে একমুখী প্রক্রিয়া বলে বিবেচনা করা হত। সেখানে শিক্ষকই প্রাধান্য পেতেন। শিক্ষার্থী ছিল নীরব শ্রোতা মাত্র।

[2] শিক্ষা উভয়মুখী প্রক্রিয়া নয় : পরবর্তীকালে শিক্ষাকে উভয়মুখী বা দ্বিমুখী প্রক্রিয়া বলে ব্যাখ্যা করা হয়। অ্যাডামসের মতে, শিক্ষা হল একটি উভমুখী প্রক্রিয়া, যেখানে শিক্ষক ও শিক্ষার্থী উভয়ই সক্রিয়। কিন্তু বর্তমানে এই ধারণাও গ্রহণযােগ্য নয়।

[3] শিক্ষা ত্রিমুখী প্রক্রিয়া নয় : কেউ কেউ শিক্ষাকে ত্রিমুখী প্রক্রিয়া হিসেবে গণ্য করেন। এক্ষেত্রে শিক্ষক-শিক্ষার্থী ছাড়াও পাঠক্রমকে একটি মৌলিক উপাদান হিসেবে বিবেচনা করা হয়। কিন্তু এই ধারণাও অসম্পূর্ণ। কারণ আধুনিক শিক্ষা ব্যবস্থায় শিক্ষক, শিক্ষার্থী, পাঠক্রম ছাড়াও আরও অনেক বিষয় সংযােজিত হয়েছে। যেমন—সমাজ, পরিবেশ, শিক্ষাপ্রযুক্তি, শিক্ষার বিভিন্ন উপায় ইত্যাদি।

[4] শিক্ষা বহুমুখী প্রক্রিয়া : আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষক, শিক্ষার্থী, পাঠক্রম ছাড়াও পরিবার, সমাজ, সম্প্রদায় প্রভৃতি শিক্ষার গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হিসেবে স্বীকৃত হয়েছে। তাই সব দিক থেকে বিবেচনা করে বলা যায় শিক্ষা আজ দ্বিমুখী বা ত্রিমুখী প্রক্রিয়া নয়, এটি একটি বহুমুখী প্রক্রিয়া।

শিক্ষার্থীর পরিপূর্ণ বিকাশের ক্ষেত্রে প্রতিটি উপাদানেরই নিজ নিজ ভূমিকা রয়েছে। কোনাে একটি উপাদান যদি যথার্থ ভূমিকা পালনে অক্ষম হয়, তাহলে সামগ্রিক শিক্ষা প্রক্রিয়াটি ব্যাহত হয়। সুতরাং এ কথা বলাই শ্রেয় যে, শিক্ষা হল একটি বহুমুখী প্রক্রিয়া।

শিক্ষা-একটি স্বয়ংক্রিয় প্রক্রিয়া

আধুনিক ধারণায় শিক্ষাকে একটি স্বয়ংক্রিয় প্রক্রিয়া বলে উল্লেখ করা হয়েছে। কারণ—

[1] শিক্ষার্থীর সক্রিয়তা ও স্বয়ঃশিক্ষা : নিষ্ক্রিয়ভাবে জ্ঞান অর্জন প্রকৃত অর্থে শিক্ষা নয়। শিক্ষার্থীর সক্রিয়তা শিক্ষার অন্যতম শর্ত। ডিউই বলেছেন—অভিজ্ঞতার গঠন ও পুনর্গঠনই হল শিক্ষা ব্যক্তি যদি নিজে সক্রিয় না হয় তাহলে অভিজ্ঞতার গঠন ও পুনর্গঠন সম্ভব নয়।

[2] অনুসন্ধিৎসা ও সৃজনশীলতার সুয়োগ : সৃজনশীলতা ও অনুসন্ধিৎসার জন্য সক্রিয়তা অপরিহার্য। এই সৃজনশীলতা ও অনুসম্ধিৎসার মধ্য দিয়েই শিশু আনন্দ পায়। এই আনন্দের অভিজ্ঞতা শিশুর বিকাশ তথা শিক্ষায় প্রেরণা জোগায়।

[3] অভিযােজনের ভূমিকা : শিক্ষা হল পরিবেশের সঙ্গে ব্যক্তির ক্রমাগত অভিযােজন এবং ক্রমবিকাশের প্রক্রিয়া সার্থক অভিযােজনের জন্য প্রয়ােজন অনুসন্ধান, জ্ঞান অর্জন ও তার প্রয়ােগ| এই অনুসন্ধান ও অর্জিত জ্ঞানের প্রয়ােগে ব্যক্তির সক্রিয়তা অপরিহার্য।

বর্তমানে স্বয়ংশিখনের ওপর গুরুত্ব আরােপ করে অনেক শিখন পদ্ধতি আবিষ্কৃত হয়েছে এবং শিক্ষাকে আরও উন্নত ও কার্যকরী করা সম্ভব হয়েছে। এ ধরনের স্বয়ংশিখন পদ্ধতির উদাহরণ হল প্রােগ্রামড় শিখন পদ্ধতি (Programmed learning instruction), পার্সোনালাইজড় ইনস্ট্রাকশন (Personalised instruction), কম্পিউটার অ্যাসিসটেড ইনস্ট্রাকশন (Computer assisted instruction) ইত্যাদি। জীবনপথে সুশৃঙ্খল আত্মসক্রিয়তার মাধ্যমে অভিজ্ঞতার পুনর্গঠন ও পুনঃসৃজনই হচ্ছে শিক্ষা। তাই শিক্ষা হল একটি স্বয়ংক্রিয় প্রক্রিয়া।

Education সব প্রশ্ন উত্তর (একাদশ শ্রেণীর)

Leave a Comment