যাঃ, টোপ খুলে গেল! হাঙ্গর পালালাে | ভারতের শ্রমজীবী সম্পর্কে লেখকের মনােভাব ব্যাখ্যা করাে

ভারতের শ্রমজীবী সম্পর্কে লেখকের মনােভাব ব্যাখ্যা করাে

স্বামী বিবেকানন্দ সুয়েজখালে : হাঙ্গর শিকার প্রবন্ধটিতে শ্রমজীবী মানুষের দুরবস্থা দেখে নিজের সহানুভূতি জ্ঞাপন করেছেন এবং সামাজিক এই শশাষণের বিরুদ্ধে নিজের প্রতিবাদ বজায় রেখেছেন। তার মতে, মুক্ত উদার ক্ষেত্র ভারতবর্ষের আদি বাসিন্দারা চিরকাল বিদেশি আক্রমণকারী জাতির দ্বারা অবহেলিত, লাঞ্ছিত, অপমানিত হয়ে চলেছে। এদেশের লােকের দ্বারা উৎপন্ন ফসলে ভরে গেছে তাদের দেশের ঐশ্বর্য-সম্পদ। তাই তিনি এদেশের চাষাভুসাে, তাতি-জেলে প্রমুখ নগণ্য মানুষকে ‘বিজাতিবিজিত অ্জাতিনিন্দিত ছােটো জাত’ বলে সম্বােধন করেছেন। এরা চিরকাল নীরবে কাজ করে যায়, কিন্তু পরিশ্রমের ফল পায় না। তাই এসব শ্রমজীবী মানুষকে তিনি জাগ্রত হতে বলেছেন যাতে বিশ্ব পরিবর্তনের আবহাওয়ায় তাদেরও এই অবস্থার পরিবর্তন ঘটে। স্বামীজি বলেছেন আমাদের পিতৃপুরুষরা দুখানা দর্শন, দশখানা কাব্য-সাহিত্য লিখে গগন ফাটিয়েছেন ঠিকই, কিন্তু এদের দুর্দশার কথা লিপিবদ্ধ করেননি। বড়াে কর্মে, বড়াে স্বার্থে অনেকেই তাদের স্বার্থ বিসর্জন দেয়, কাপুরুষও প্রাণ ত্যাগ করতে সমর্থ হয়। কিন্তু অতিক্ষুদ্র কাজে অজান্তে যারা নিঃস্বার্থতা, কর্তব্যপরায়ণতা দেখায়, সেই চিরপদদলিত, মনুষ্যসমাজের ভারবাহী শ্রমজীবী মানুষকেই তিনি তার এই প্রবন্ধে প্রণাম জানিয়েছেন। সকলের পূজ্য ধর্মবীর, রণবীর বা কাব্যবীরদের উর্ধ্বে এই শ্রমজীবী মানুষদের স্থান দিয়েছেন তিনি।

“যাঃ, টোপ খুলে গেল! হাঙ্গর পালালাে।” -টোপ খুলে হাঙর কীভাবে পালিয়েছিল তা রচনা অবলম্বনে লেখাে।

স্বামী বিবেকানন্দের সুয়েজখালে : হাঙ্গর শিকার রচনায় আমরা দেখি যে, সেরখানেক শুয়ােরের মাংসের টোপ-সহ প্রকাণ্ড বড়শি ফাতনা-সহ জলে ফেলার অনেকক্ষণ পর হাঙর টোপ গিলতে এগিয়ে আসে। কিন্তু এগিয়ে এসেও দুদুবার হাঙরটি টোপ না গিলে ল্যাজ নাড়িয়ে, শরীর ঘুরিয়ে চলে যায়। তৃতীয়বার ল্যাজ বাঁকিয়ে একটা পাক দিয়ে ঘুরে এসে শেষমেষ হাঁ করে টোপ মুখে দেয় হাঙরটি এবং তারপরই চিৎ হয়ে পড়ে থাকে। এটা দেখে সবাই চিৎকার করতে থাকে—“টোপ খেয়েছে টান টান টান। চল্লিশ-পঞ্জাশ জন লােক তখন বড়শির দড়ি ধরে প্রাণপণে টানতে থাকে। কিন্তু হাঙরটির ছিল যেমন শক্তি, তেমন ছিল তার ল্যাজ ঝাপটানাে আর রাক্ষুসে হাঁ। সুতরাং হাঙরে-মানুষে টানাটানি চলতে থাকে। এই টানাটানিতে কখনও হাঙরটি জলের ওপর উঠল, কখনও আবার জলমধ্যেই ঘুরতে লাগল, কখনও বা নিস্তেজ হয়ে রইল। কিন্তু মাংস-সহ বড়শিটি হাঙরের পেটে যাওয়ার বা মুখের ভিতরে বিঁধে যাওয়ার আগেই যেহেতু যাত্রীরা তাড়াহুড়াে করে টানাটানি শুরু করেছিল, তাই একসময় হঠাৎই বড়শি-সহ টোপ খুলে পড়ে হাঙরের মুখ থেকে। ফলে হাঙরটি যাত্রীদের হতাশ করে পালিয়ে যায়।

বাংলা সব প্রশ্ন উত্তর (একাদশ শ্রেণি)

Leave a Comment