ভারত চার ভাষাবংশের দেশ— এই চার ভাষাবংশের পরিচয় | হিন্দুস্থানি ভাষা অর্থাৎ হিন্দি ও উর্দু ভাষা কীভাবে সৃষ্টি হয়েছে | প্রাচীন ভারতীয় আর্যভাষা থেকে বাংলা ভাষা উদ্ভবের ধারা

ভারত চার ভাষাবংশের দেশ—এই চার ভাষাবংশের পরিচয় দাও:

ভারতে প্রচলিত চারটি ভাষাবংশের নাম ইন্দো ইউরােপীয়, অস্ট্রিক, দ্রাবিড় এবং ভােট-চিনীয়।

ইন্দো-ইউরােপীয়: ইন্দো-ইউরােপীয় ভাষাবংশ ভারত, ইরান এবং ইউরােপের অধিকাংশ ভাষার আদি উৎস। এই ভাষাবংশের আর্য বা ইন্দো-ইরানীয় শাখাটি দুটি উপশাখায় বিভক্ত-ইরানীয় আর্য এবং ভারতীয় আর্য। ভারতীয় আর্যভাষা ভারতবর্ষের বিভিন্ন স্থানে তিনটি স্তরে বিবর্তিত হয়ে অনেকগুলি আধুনিক ভারতীয় আর্য ভাষার জন্ম দিয়েছে।

অস্ট্রিক: অস্ট্রিক ভাষাবংশের যে একাধিক শাখা (কোল বা মুন্ডা, খাসি-নিকোবরি এবং মােখমের) রয়েছে, সেগুলির মধ্যে কোল বা মুন্ডা শাখাটিই ভারতবর্ষে প্রচলিত। কোল বা মুন্ডার দুটি ভাগের মধ্যে শবর, কোরকু, খরিয়া প্রভৃতি পূর্বী শাখার অন্তর্গত এবং সাঁওতালি, মুন্ডারি, হাে প্রভৃতি ভাষা পশ্চিমা শাখার অন্তর্গত।

দ্রাবিড়: ভারতবর্ষের দক্ষিণাংশে প্রচলিত মালয়ালম, তামিল, তেলুগু প্রভৃতি ভাষা দ্রাবিড় ভাষাবংশের অন্তর্গত। অন্ধ্রপ্রদেশে তেলুগু, তামিলনাড়ু; পণ্ডিচেরি ও সিংহলে তামিল, কেরালায় মালয়ালম এবং কর্ণাটকে কন্নড় ভাষা প্রচলিত।

ভােট-চিনীয়: এই ভাষাবংশের প্রধান শাখা তিনটিচিনীয়, থাই এবং তিব্বতি বর্মি বা ভােটবর্মি। চিনীয় ভাষার প্রচলন চিনদেশে এবং থাই শাখাটির শ্যাম দেশে। তিব্বতি বর্মি বা ভােট-বর্মি শাখার বেশ কয়েকটি উপশাখা (বােড়াে, নাগা, লুসাই, লেপচা প্রভৃতি) ভারতবর্ষে প্রচলিত।

হিন্দুস্থানি ভাষা অর্থাৎ হিন্দি ও উর্দু ভাষা কীভাবে সৃষ্টি হয়েছে তা লেখাে।

হিন্দুস্থানি (হিন্দি ও উর্দু) ভাষা সৃষ্টি হয়েছে। মধ্যদেশীয় শৌরসেনী অপভ্রংশ-অবহটঠ থেকে। দিল্লি-মিরাট অঞ্চলের কথ্য হিন্দুস্থানি এবং হরিয়ানা ও দক্ষিণ-পূর্ব পাঞ্জাবের খড়িবােলি বঙ্গারু বা হরিয়ানি ভাষা-পশ্চিমা হিন্দির এই দুই উপভাষা নিয়ে দিল্লির পাঠান (মুঘল-পূর্ব) সম্রাটদের আমলেই দিল্লি অঞ্চলে তৈরি হয় হিন্দুস্থানি ভাষা। ক্রমে ক্রমে সমগ্র উত্তর ও মধ্য ভারতে এই হিন্দুস্থানি ভাষার প্রসার হয়।

উত্তর ভারত থেকে পাঠান ও মােগল যুগে যেসব মুসলমান প্রজা যুদ্ধের কারণে বা অন্যান্য কারণে দক্ষিণ ভারতে গিয়েছিলেন, তারা সেখানে হিন্দুস্থানি ভাষার প্রসার ঘটান। এর নাম হয় দখনি ভাষা। এটি দিল্লিতেও চর্চিত হত। সপ্তদশ শতাব্দীতে সেনাবাহিনী কথিত (উর্দু শব্দের অর্থ সৈন্য বা সেনানিবাস) এই বিশেষ হিন্দুস্থানি ভাষা উর্দুভাষা হিসেবে অভিহিত হয়। সপ্তদশ শতাব্দীর মধ্যভাগে শাহজাহানের রাজত্বকালে এই উর্দু ভাষা ফারসি ভাষার পরিবর্তে মােগল-ভারতের রাজভাষায় পরিণত হয়।

উত্তর ও মধ্যভারতের হিন্দুরা বেশ কয়েকটি প্রান্তিক ভাষা (ব্রজভাষা, অবধি ইত্যাদি) দেবনাগরী লিপিতেই লিখতেন। এই সময় থেকেই তারা হিন্দুস্থানি ভাষায় লেখালেখি শুরু করেন এবং ব্যবহার করতে শুরু করেন দেবনাগরী লিপি। একই হিন্দুস্থানি ভাষার দুটি রূপ সৃষ্টি হয়-মুসলমানি রূপ উর্দু এবং অ-মুসলমানি রূপ হিন্দি।

উর্দু এবং হিন্দি মূলত একই ভাষার দুটি রূপ। এই দুই ভাষার পার্থক্য কেবল লিপিতেই। তবে, উচ্চ ভাব ও ভাবনা প্রকাশকারী কিছু শব্দ হিন্দি যেখানে নিয়েছে সংস্কৃত থেকে, উর্দু তা আরবি- ফারসি-তুর্কি ভাষা থেকে গ্রহণ করেছে।

প্রাচীন ভারতীয় আর্যভাষা থেকে বাংলা ভাষা উদ্ভবের ধারাটি উদাহরণসহ আলােচনা

প্রাচীন ভারতীয় আর্যভাষার বিবর্তিত রূপ হল মধ্য ভারতীয় আর্যভাষা, সাধারণভাবে যাকে বলা হয় প্রাকৃত। ভারতবর্ষের বিভিন্ন প্রান্তে মধ্য ভারতীয় আর্যভাষার বিভিন্ন আঞ্চলিক রূপ গড়ে ওঠে। ভারতের পূর্বাঞ্চলে প্রচলিত এইরকম একটি আঞ্চলিক রূপের নাম মাগধী প্রাকৃত। মাগধী প্রাকৃতের পরিবর্তিত রূপ হল মাগধী অপভ্রংশ। এটিকে মধ্য ভারতীয় আর্যভাষার সর্বশেষ স্তরের একটি আঞ্চলিক রূপ বলা হয়। এই মাগধী অপভ্রংশের দুটি শাখা। একটি শাখা থেকে জন্ম নেয় ভােজপুরি, মৈথিলি ও মগহি এবং আর-একটি শাখা থেকে জন্ম নেয় বাংলা, অসমিয়া ও ওড়িয়া। বাংলা ও অসমিয়া প্রথম দিকে অভিন্ন থাকলেও পরে দুটি ভাষা আলাদা হয়ে যায়।

বাংলা সব প্রশ্ন উত্তর (একাদশ শ্রেণি)

Leave a Comment