ভারতের ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের প্রসারের সংক্ষিপ্ত পরিচয় দাও?

ভারতের ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের প্রসার

ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ১৬০০ খ্রিস্টাব্দে ৩১ ডিসেম্বরের ইংল্যান্ডের রানী এলিজাবেথের কাছে থেকে প্রাচ্য দেশের ১৫ বছর জন্য একচেটিয়া বাণিজ্যের অধিকার পায়। ইংরেজরা ১৬১৩ খ্রিস্টাব্দে ভারতের সুরা তাদের প্রথম বাণিজ্য কুঠি স্থাপন করে। ব্রিটিশ রাজ প্রথম জেমসের দূত স্যার টমাস রো সো ১৬১৫ খ্রিস্টাব্দে মুঘল সম্রাট জাহাঙ্গীরের দরবারে হাজির হয়ে কিছু বাণিজ্যিক সুযোগ-সুবিধা প্রার্থনা করেন। ১৬১৯ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে সুরাট, আগ্রা, আহাম্মদনগর, ব্রোজ প্রভৃতি স্থানে ইংরেজদের বাণিজ্য কুঠি গড়ে ওঠে। পরবর্তীকালে ব্রিটিশরা নিজেদের বুদ্ধি ও শক্তির সহায়তায় বাংলা রাজনৈতিক ক্ষমতা দখল করে। ক্রমে ভারতে অন্যান্য স্থানীয় ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের প্রসার ঘটে। এ সম্পর্কে নিচে আলোচনা করা হলো –

১. বাংলা, বিহার, ওড়িশা

ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি কলকাতা কর্তৃপক্ষ বাংলার নবাব সিরাজউদ্দৌলাকে ১৭৫৭ খ্রিস্টাব্দে পলাশীর যুদ্ধে এবং ১৭৬৪ খ্রিস্টাব্দে মিরকাশিমকে বক্সারের যুদ্ধে পরাজিত করে। ব্রিটিশ কোম্পানি মুঘল সম্রাট দ্বিতীয় সহ আমলের কাছ থেকে ১৭৬৫ খ্রিস্টাব্দে এলাহবাদে দ্বিতীয় সন্ধির ১৬ আগস্ট মাধ্যমিক বাংলা, বিহার ও উড়িষ্যার দেওয়ানী অর্থাৎ রাজস্ব আদাই ও দেওয়ানি বিচারের অধিকার লাভ করে। এভাবে ব্রিটিশ কোম্পানি বাংলা, বিহার ও ওড়িশা নিজেদের রাজনৈতিক আধিপত্য সুপ্রতিষ্ঠিত করে।

২. মহীশূর

দক্ষিণ ভারতের উদীয়মান শক্তি মহীশুরের হাইদার আলী প্রথম ইঙ্গ মহীশূর যুদ্ধে ১৭৬৭-১৭৬৯ খ্রিস্টাব্দে নিজেদের শক্তি প্রদর্শন করতে সক্ষম হলে দ্বিতীয় ইঙ্গ মহীশূর যুদ্ধ ১৭৮০-১৮৮৪ খ্রিস্টাব্দে হায়দ্রাবাদ আলী ও তার পুত্র টিপু সুলতানা পরাজিত হন। পরবর্তীকালে টিপু সুলতানা তার দ্বিতীয় ইঙ্গ মহীশূর যুদ্ধে ১৭৮৯-৯২ খ্রিস্টাব্দেও চতুর্থ ইঙ্গ মহীশূর যুদ্ধ ১৭৯৮-৯৯ হিসাবে ইংরেজ বাহিনীর কাছে পরাজিত হন। চতুর্থ যুদ্ধে দীপু যুদ্ধক্ষেত্রে নিহত হন এবং মহীশুরের বৃহঅংশ ইংরেজরা দখল করে নেয়। এভাবে মহীশূর ব্রিটিশ আধিপত্য প্রতিষ্ঠিত হয়।

৩. মারাঠা

মারাঠাদের বিরুদ্ধে প্রথম ইঙ্গ মারাঠা যুদ্ধে ১৮৭৫-১৮৮২ খ্রিস্টাব্দে ইংরেজ কোম্পানি বিশেষ সাফল্য দেখাতে পারেনি। তবে তবে কোম্পানির বাহিনী দ্বিতীয় ইঙ্গ মারাঠা যুদ্ধে ১৮০৩-১৮০৫ খ্রিস্টাব্দে বিভিন্ন মারাঠা নেতাকে একে একে পরাজিত করে। এই পরাজিত নেতারা অধীনতামূলক মিত্রতা গ্রহণে বাধ্য হয়। তৃতীয় ইঙ্গ মারাঠা যুদ্ধ ১৮১৭-১৮১৮ খ্রিস্টাব্দে মারাঠা শক্তি ইংরেজদের কাছে চূড়ান্ত রূপে পরাজিত হয়। পেশোয়া পদে লুপ্ত করে মারাঠা রাজ্য কোম্পানি দখল করে নেয়।

৪. পাঞ্জাব

ব্রিটিশ কোম্পানি পাঞ্জাবের শিখ নেতা রঞ্জিত সিংয়ের ১৮৮০-১৮৩৯ খ্রিস্টাব্দের সঙ্গে অমৃতসরের সন্ধি ১৮০৯ খ্রিস্টাব্দে স্বাক্ষর করে। এই সন্ধির শর্ত অনুসারে তিনি শতদ্রু নদীর পর্ব তীরবর্তী অঞ্চলে তার দাবি ত্যাগ করেন। ফলে এই অঞ্চল ব্রিটিশদের অভাব বিচরণ ক্ষেত্রে পরিণত হয়। রঞ্জিত সিংহের পরবর্তীকালে শিখ শক্তির প্রথম ইঙ্গ শিখ যুদ্ধে ১৮৫-১৮৪৯ খ্রিস্টাব্দে কোম্পানির বাহিনীর কাছে পরাজিত হয়। এরপরে স্বাধীন শিখ সাম্রাজ্যের পতন ঘটে এবং সমগ্র পাঞ্জাব ব্রিটিশ সাম্রাজ্য ভুক্ত হয়।

৫. অধীনতামূলক মিত্রতা নীতি

নগ্ন সাম্রাজ্যবাদী শাসক লর্ড ওয়েলসলি অধীনতামূলক মিত্রতা নীতি ১৭৯৮ খ্রিস্টাব্দে প্রবর্তন করে দেশীয় রাজ্যগুলির সম্পূর্ণ রূপে কোম্পানির উপর নির্ভরশীল করে তোলার উদ্যোগ নেযন। এই নীতি প্রয়োগ করে ভারতের ব্রিটিশ শক্তি হায়দাবাদ, সুরাট, তাঞ্জোর, কর্ণাটক, অযোধ্যা, মালব, বুন্দেলখন্ড, উদয়পুর, যোধপুর ও জয়পুর প্রভৃতি স্থানের নিজেদের আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করে। ১৮১৭ খ্রিস্টাব্দে থেকে ১৮২৩ খ্রিস্টাব্দে প্রতিষ্ঠা করে। ১৮১৭ খ্রিস্টাব্দে থেকে 1823 খ্রিস্টাব্দের মধ্যে কিছু ক্ষুদ্র রাজপুত রাজ্য এই চুক্তিতে স্বাক্ষর করে।

৬. ডালহৌসি সাম্রাজ্যবাদী নীতি

লর্ড ওয়েলসলি কর্তৃক অধীনতামূলক নীতি প্রয়োগে প্রায় অর্ধ শতাব্দীর পরে অপর সাম্রাজ্যবাদী ব্রিটিশ শাসক লজ্জা সাম্রাজ্য বিস্তারের জন্য তিনটি নীতি গ্রহণ করেন, যথা –

(১) যুদ্ধের দ্বারা রাজ্য জয় : ডালহৌসি যুদ্ধের দ্বারা পাঞ্জা, সমগ্র দক্ষিণ ব্রাহ্ম, আরাকান ও তেনাসেরিম জয় করেন।

(২) কুশাসনের অজুহাতে রাজ্য দখল : ডালহৌসি কুশাসনের অভিযোগে অযোধ্যা, সিকিমের একাংশ ও বেরার দখল করে নেন।

(৩) স্বত্ববিলোপ নীতির প্রয়োগ ; ডালহৌসি স্বত্ববিলোপ নীতির ১৮৪৮ খ্রিস্টাব্দের মাধ্যমে সাতারা, জয়েৎপুর, সম্বলপুর, বাঘাট ভগৎ, উদয়পুর, ঝাসি ও নাগপুর প্রভৃতি স্থান দখল করেন।

উপসংহার

সাম্রাজ্যবাদী ব্রিটিশ শক্তি দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন সক্রিয় উদ্যোগের দ্বারা ভারতে সুবিশাল সাম্রাজ্য গড়ে তোলে। সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠার পর থেকে এ দেশের ইংরেজদের কাছে ভারত শাসন ব্যবস্থা প্রণয়ন, ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন দমন প্রভৃতি বিষয়গুলি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। সাম্রাজে বাজে ইংরেজ শাসনে ভারতীয়দের বিভিন্ন অধিকার ও স্বাধীনতা কেড়ে নেওয়া হয় এবং সাধারণ ভারতীয়দের চরম দুর্দশা দেখা দেয়।

উচ্চমাধ্যমিক ইতিহাস বইয়ের সমস্ত প্রশ্নের উত্তর

Leave a Comment