বিদেশনীতির অর্থ ?

আন্তর্জাতিক সম্পর্কের লেখক চার্লস বাটন মার্শাল তাঁর The Limits of Foreign Policy শীর্ষক রচনায় বিদেশনীতির সংজ্ঞা নির্ধারিত করতে গিয়ে সংক্ষেপে বলেছেন, আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে রাষ্ট্র যে সকল ক্রিয়াকলাপ সম্পাদন করে থাকে অথবা করতে চায়, তার সমষ্টি হল বিদেশনীতি।

জাতীয় স্বার্থরক্ষাই হল বিদেশনীতির প্রধান উদ্দেশ্য। প্রতিটি রাষ্ট্রই তার জাতীয় স্বার্থের দ্বারা চালিত হয়। বিদেশনীতি দেশের বাইরে রাষ্ট্রের জাতীয় স্বার্থপূরণে সাহায্য করে। বাস্তববাদী লেখকরা অবশ্য মনে করেন, আন্তর্জাতিক ব্যবস্থায় রাষ্ট্রের ক্ষমতা বৃদ্ধি ও প্রভাব-প্রতিপত্তির প্রসার ঘটানোই হল বিদেশনীতির প্রধান উদ্দেশ্য। তবে শুধুমাত্র জাতীয় স্বার্থপূরণ বা ক্ষমতার প্রসার ঘটানো নয়, আধুনিক যুগে বিদেশনীতির আওতায় আরও বহু বিষয় জড়িয়ে থাকে। এর মধ্যে রয়েছে জাতীয় ঐতিহ্য, জাতীয় নিরাপত্তা,

আন্তর্জাতিক লেনদেন, বাণিজ্যিক ব্যবস্থা, সাংস্কৃতিক বিনিময়, পরিবেশ দূষণের প্রতিকার, প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের মোকাবিলা, সন্ত্রাসবাদ দমন প্রভৃতি।

আন্তর্জাতিক সম্পর্কের আধুনিক লেখকদের মতে, বিদেশনীতি তৈরির মূল দায়িত্ব রাষ্ট্রের প্রতিভূ সরকারের হাতে থাকলেও বর্তমান গণতান্ত্রিক যুগে দেশের জনমতেরও একটি বড়ো ভূমিকা থাকে। অনেক সময় এটা দেখা গেছে বিদেশনীতি সম্পর্কিত কোনো গুরুতর সিদ্ধান্ত, এমনকি সামরিক যুদ্ধ ঘোষণা করতে গিয়ে জনমতের চাপে পিছিয়ে এসেছে সরকার। অতীতে এই ধরনের বহু দৃষ্টান্ত রয়েছে। অতি সম্প্রতি ২০১৩ খ্রিস্টাব্দের সেপ্টেম্বরে মার্কিন রাষ্ট্রপতি বারাক ওবামা সিরিয়া আক্রমণের প্রস্তুতি সেরে যুদ্ধ ঘোষণা করতে গিয়ে জনমতের প্রবল চাপে সরে আসেন। রাষ্ট্রপতির সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে একদিকে যেমন হাজার হাজার মার্কিন জনগণ রাস্তায় নামেন, অন্যদিকে তেমনি মার্কিন আইনসভা কংগ্রেসও এই সিদ্ধান্তের বিপক্ষে তাঁদের মতামত জানিয়ে দেন। শেষ অবধি সিরিয়া আক্রমণের সিদ্ধান্ত স্থগিত রাখতে বাধ্য হন মার্কিন রাষ্ট্রপতি।

Leave a Comment