বাংলা গানের ধারায় শ্রীকৃষ্ণকীর্তনের ভূমিকা আলোচনা করো?

নাট্যগীতি জাতীয় রচনা

আদি মধ্যযুগের বাংলা ভাষায় একমাত্র নির্দেশন এবং মধ্যযুগের বাংলা সাহিত্যের আদি পূর্বের সাহিত্যকীর্তি বড়ু চন্ডীদাসের লেখা নাট্যগীতি জাতীয় রচনা ‘শ্রীকৃষ্ণ কীর্তন’ । নাট্য লক্ষণ যুক্ত এই আখ্যান কাব্যটির ছত্রে ছত্রে মিশে রয়েছে গীতি রস। আলোচ্য কাব্যে নাট্যধর্ম প্রাধান্য লাভ করলেও গীতি কবিতার সুর অনুরণিত হয়েছে অনেক পদেই। ‘শ্রীকৃষ্ণকীর্তন: কাব্যে মোট 1418 টি পদ ও ৩২ টি মিষ্টি রাগরাগিণীর উল্লেখ রয়েছে।। প্রতিটি পদেই রয়েছে রাগ ও তালের সু কষ্ট নির্দেশ। আহারে, ককু, কহুগুর্জরী, কোড়াদেশাগ, দেশবরাড়ী, বসন্ত, পাহাড়ি, বিভাষ, ধানুষী, রামগির, মালব, মালবশ্রী, গুর্জরী ইত্যাদি রাগের উল্লেখ রয়েছে ‘শ্রীকৃষ্ণকীর্তন’-এ।

লোকো সংগীতের প্রভাব

‘শ্রীকৃষ্ণকীর্তন’ কাব্যের প্রথম দিকে ঝুমুর শ্রেণীর লোকসংগীত এর প্রভাব লক্ষ্য করা যায়। ১৩ টি খন্ডে বিভক্ত এ কাব্যের শেষ দুটি খন্ড তথা ‘বংশী খন্ড’ ও ‘রাধা বিরহ’ এ জিতি কবিতার সুর মূর্ছানা অন্য মাত্রা লাভ করেছে ; নাটকীয় চাঞ্চল্য এবং গীতিকবিতার গভীরতায় মিলে গিয়েছে। ‘রাধা বিরহ’ খণ্ডে গীতি রসে যে স্বতঃস্ফূর্ত প্রকাশ ঘটেছে তা পরিপূর্ণতা লাভ করেছে পরবর্তী বৈষ্ণব পদাবলীর মধ্যে। ‘বংশী খন্ড’-এর অন্তর্গত-

“কাহ্নাঞি বিহানি মোর সকল সংসার ভাল দশদিক লাগে মোর শূন্য। অঞ্চলের সোনা মোড় কেনা হরি ল‌আঁ গেল কিবা তার কৈলোঁ আগুন।।”

ইত্যাদি পর দিয়ে গীতি রসের প্রকাশ ঘটেছে বাংলা গানের ইতিহাসের প্রাথমিক পর্যায়ের তার মূল্য অস্বীকার করার উপায় নেই। ‘শ্রীকৃষ্ণকীর্তন’ তোর তো কথা যদি কিছু থেকেও থাকে গীতি রসের প্রভাবে তার চাপা পড়ে গিয়েছে বলেই কাব্যটি বাঙালির আপনার হয়ে উঠতে পেরেছি।

দ্বাদশ শ্রেণির বাংলা সমস্ত অধ্যায় অনুযায়ী তার সব প্রশ্নের উত্তর

Leave a Comment