সূচনা: পারস্যের আকিমেনীয় সাম্রাজ্য বৃহৎ ও ক্ষুদ্র কয়েকটি অঞ্চলে বিভক্ত ছিল যেগুলির নাম ছিল স্যাট্রাপি। স্যাট্রাপিল্লুলির শাসনকতা ছিলেন স্যাট্রাপ, যারা রাজার কাছে প্রত্যক্ষভাবে দায়বদ্ধ ছিলেন।
স্যাট্রাপদের পরিচয়
[1] অর্থ: প্রাচীন পারসিক অর্থে স্যাট্রাপ বলতে সাম্রাজ্যের রক্ষাকর্তাকে বােঝাত। এক কথায়, আকিমেনীয় সাম্রাজ্যের একটি প্রশাসনিক বিভাগ ছিল স্যাট্রাপি আর এই বিভাগের প্রধান ছিলেন স্যাট্রাপ।
[2] উৎস: ‘Satrap’ শব্দটির উদ্ভব ঘটেছে গ্রিক শব্দ ‘Satrapeia’ থেকে। Satrapy শব্দটির আভিধানিক অর্থ হল প্রাচীন পারস্যের প্রদেশ। আর Satrap শব্দের আভিধানিক অর্থ হল প্রাচীন পারস্যের প্রাদেশিক শাসনকর্তা।
[3] আত্মপ্রকাশ: বিভিন্ন জাতিগােষ্ঠী অধ্যুষিত আকিমেনীয় সাম্রাজ্যে সুশাসন প্রতিষ্ঠা ও কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ সুদৃঢ় করার প্রয়ােজনীয়তা থেকেই পারসিক সম্রাট কাইরাস আনুমানিক ৫৩০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে পারস্যের আকিমেনীয় সাম্রাজ্যে প্রাদেশিক শাসনব্যবস্থা চালু করেন। ফলে প্রদেশ বা সাট্র্যাপিগুলিতে স্যাট্রাপদের নিয়ােগ করা শুরু হয়।
[4] কার্যাবলি: স্যাট্রাপির প্রধান শাসনকর্তা হিসেবে স্যাট্রাপদের বেশকিছু কাজ করতে হত। যেমন一
- কর আদায় ও জমা: ট্যাক্স আদায় করা ও তা সরকারি কোশাগারে জমা দেওয়া।
- সেনা নিয়ােগ: যুদ্ধে পারদর্শী ব্যক্তিকে সেনাবাহিনীতে নিয়ােগ করা।
- আমলা নিয়ােগ: আঞ্চলিক প্রশাসনিক স্তরে আমলাদের নিয়ােগ করা।
- বিদ্রোহ দমন: অভ্যন্তরীণ বিদ্রোহগুলির অবসান ঘটানাে।
- সমস্যার মােকাবিলা: প্রদেশগ্লুলির বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি বা নানাবিধ সমস্যার মােকাবিলা করা।
- বৈদেশিক আক্রমণ রোধ: বৈদেশিক আক্রমণ প্রতিরােধ করা।
- সমরবাহিনীর রক্ষণাবেক্ষণ: সামরিক শক্তির রক্ষণাবেক্ষণ করা।
- বিচারকাজ: স্যাট্রাপ ছিলেন প্রদেশের বিচার বিভাগের প্রধান। পৌর এবং ফৌজদারি অপরাধের তিনি বিচার করতেন।
- বাৎসরিক খতিয়ান পেশ: সঠিক সময়ে খতিয়ান পেশ-এ ব্যর্থ হলে স্যাট্রাপদের মহান রাজা প্রথমে সতর্ক করতেন এবং পরে তার পদ কেড়ে নিতেন।
[5] স্যাট্রাপের সঙ্গে সম্রাটের সম্পর্ক
- দায়বদ্ধতার: পারস্যের বিভিন্ন প্রদেশে নিয়ােজিত। স্যাট্রাপগণ ছিলেন মূলত সম্রাটের প্রতিনিধি। তারা নিজেদের কাজের জন্য সম্রাটের কাছে দায়বদ্ধ ছিলেন।
- কর্তব্যগত: স্যাট্রাপদের প্রদেশগুলিতে বিভিন্ন কর্তব্য পালন করতে হত। যেমন কর আদায় ও জমা, বিদ্রোহ দমন, বাৎসরিক খতিয়ান পেশ প্রভৃতি।
- প্রতিনিধিত্বগত: সামরিক শক্তি প্রদর্শন এবং রাজকীয় কর্তৃত্ব পালনের মধ্যে দিয়েই তারা নিজেদেরকে সম্রাটের সফল প্রতিনিধি হিসেবে প্রমাণ করার চেষ্টা করতেন।
- নিয়ােগ ও পদচ্যুতিগত: নিয়ােগ থেকে শুরু করে পদচ্যুতি পর্যন্ত স্যাট্রাপদের ভাগ্য নির্ভরশীল ছিল সম্রাটের ওপর। দায়িত্বে অবহেলা দেখালে তারা সম্রাট কর্তৃক স্যাট্রাপগপ পদচ্যুত হতেন।
[6] স্যাট্রাপগুলির বিদ্রোহ: পরবর্তী সময়ে পারস্যের কেন্দ্রীয় শাসন দুর্বল হয়ে পড়লে সেই সুযােগে বিভিন্ন পারসিক স্যাট্রাপির শাসক স্যাট্রাপগণ স্বাধীনতাকামী হয়ে ওঠেন। পারসিক সম্রাট দ্বিতীয় ফিলিপ ও তৃতীয় আলেকজান্ডারের শাসনকালে এশিয়া মাইনর ও সিরিয়ার বিস্তীর্ণ অঞ্চল জুড়ে স্যাট্রাপগণ বিদ্রোহ ঘােষণা করেন।
স্যাট্রাপির গঠনকাঠামাে
সমগ্র আকিমেনীয় সাম্রাজ্যটি বেশ কয়েকটি বৃহৎ স্যাট্রাপিতে বিভক্ত ছিল। এই বৃহৎ স্যাট্রাপিগুলি আবার কয়েকটি মুখ্যকেন্দ্রীয় এবং ক্ষুদ্র স্যাট্রাপিতে বিভক্ত ছিল।
[1] বৃহৎ স্যাট্রাপি: কয়েকটি বৃহৎ স্যাট্রাপি ছিল [i] পারসা/পারসিস, [ii] মাডা/মিডিয়া, [iii] পার্ডা/লিডিয়া, [iv] ব্যাবিরাস/ব্যাবিলনিয়া, [v] মুদ্রায়া/ইজিপ্ট, [vi] আরাকোসিয়া, [vii] ব্যাক্টিস/ব্যাকট্রিয়া ইত্যাদি।
[2] কেন্দ্রীয় ক্ষুদ্র স্যাট্রাপি: কয়েকটি কেন্দ্রীয় ক্ষুদ্র স্যাট্রাপি ছিলপার্থিয়া, আরমেনিয়া, কাপাডােসিয়া, লিভিয়া, আসিরিয়া, নিম্ন ইজিপ্ট, হারভাসিয়া, স্যাট্রাজিডিয়া ইত্যাদি।
[3] ক্ষুদ্র স্যাট্রাপি: কয়েকটি ক্ষুদ্র স্যাট্রাপি ছিলপ্যারাট্যাসিন, হিরকানিয়া, কোলচিস, সিরিয়া, সিটামিন, আরবেলিটিস, কারিয়া, ফ্রিজিয়া, ওরিটা, অ্যারিয়াসপে ইত্যাদি।