পঞ্চম, ষষ্ঠ, সপ্তম ও অষ্টম জোট নিরপেক্ষ সম্মেলনের ওপর আলোকপাত করো? অথবা, কলম্বো সম্মেলন ১৯৬৭ খ্রিস্টাব্দে, দিল্লি সম্মেলন ১৯৮৩ খ্রিস্টাব্দে এবং হারের সম্মেলন ১৯৮৯ খ্রিস্টাব্দের ওপর সংক্ষিপ্ত আলোচনা করো?

সূচনা

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ তার বিশ্বের পরস্পর বিরোধী ২ জোট কেন্দ্রিক সোভিয়ে নেতৃত্বাধীন সাম্যবাদী জোট এবং মার্কিন নেত্রীর তাদের পুঁজিবাদী জোট রাজনীতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ হিসেবে গড়ে ওঠে জোট নিরপেক্ষ আন্দোল। যুগোশ্লাভিয়া রাজধানী বেলগেট যোনির অপেক্ষায় আন্দোলনের প্রথম সম্মেলনে বসে। এরপর কয়েক বছর অন্তর একাধিক জোট নিরপেক্ষ সম্মেলনে অনুষ্ঠিত হয়। এভাবে বিশ্বের জোট নিরপেক্ষ আন্দোলনের প্রসার ঘটে।

পঞ্চম থেকে অষ্টম জোট নিরপেক্ষ সম্মেলন

« কলম্বো সম্মেলন

১. আয়োজন

১৯৭৬ খ্রিস্টাব্দের শ্রীলঙ্কায় রাজধানী কলম্বো অনুষ্ঠিত হয় জোট নিরপেক্ষ কলম্বো সম্মেলন। এই পঞ্চম জোট নিরপেক্ষ সম্মেলনটি শুরু হয় ১৬ আগস্ট এবং শেষ হয় ১৯ আগস্ট।

২. অংশগ্রহণকারী দেশ ও নেতৃবৃন্দ

এই সম্মেলনের মোট ৮৬ টি দেশ যোগ দিয়েছিল। এই সম্মেলনের সভাপতি শ্রীলঙ্কায় উইলিয়াম গোপাল্লাওয়া এবং জুনিয়রস রিচার্ড জয়াবর্ধন।

৩. গৃহীত সিদ্ধান্ত

এই সমাধানের বেশ কয়েকটি আন্তর্জাতিক বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়, যেমন –

(১) দক্ষিণ আফ্রিকা এবং নামি বিয়ার মুক্তি সংগ্রামে সাহায্যর্থে একটি তহবিল গঠন।

(২) জোট নিরপেক্ষ আন্দোলনের প্রসারের সুষ্ঠুভাবে গণমাধ্যমিকে ব্যবহারের লোকে একটি Press Agency Pool গঠনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ।

(৩) সাম্রাজ্যবাদ, উপনিবেশবাদ, বর্ণ বৈষম্য বাদ এবং ইহুদিন প্রভুত্ববাদকে বিপদজনক হিসেবে চিহ্নিত করে সেগুলির বিরুদ্ধে সর্বানাত্মক সংগ্রাম পরিচালনার সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রকৃতি।

৪. গুরুত্ব

কলম সম্মেলনে নির্জন সদস্য ভুক্ত দেশগুলোকে ঐক্যবদ্ধ করার জন্য তাদের বিদেশী নীতির মধ্যে সমন্বয় সাধনের উপর অধিক গুরুত্ব দেওয়া হয়। পাশাপাশি বিশ্বের বিভিন্ন রাষ্ট্রগুলির মধ্যেকার বিবাদ মেটানোর ব্যাপারে নির্জট দেশগুলি যাতে বিশেষ ভূমিকা নিতে পারে সে ব্যাপারে গুরুত্ব দেওয়ার কথা বলা হয়।

« হাভানা সম্মেলন

১. আয়োজন

কিউবার রাজধানী হাভানা শহরের ষষ্ঠ জোড় নিরপেক্ষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এই সম্মেলনটি শুরু হয় ১৯৭৯ খ্রিস্টাব্দে ৩ সেপ্টেম্বর আর শেষ হয় ৯ সেপ্টেম্বর।

২. অংশগ্রহণকারী দেশ ও নেতৃবৃন্দ

এই সম্মেলনে অংশগ্রহণ করে ৯৪ টি দেশ। এই সম্মেলনের বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা ছিল পাকিস্তানের অংশগ্রহণ। সম্মেলনের বিশেষ ভূমিকা পালন করে কিউবার রাষ্ট্রপ্রধান ফিদেল কাস্ত্রো এবং ভারতের রাষ্ট্রপতি নিলাম সঞ্জিবা রেড্ডি। এই সম্মেলন শুরু হওয়ার আগের মুহূর্তে বিভিন্ন দেশের বিদেশের মন্ত্রীদের মধ্যে এক বৈঠক বসে। এই বৈঠকে মূলত দুটি বিষয়কে কেন্দ্র করে মতপার্থক্য দেখা যায়। এই দুটি বিষয়ের মধ্যে প্রথমটি ছিল কমোডিয়া প্রসঙ্গ, দ্বিতীয়টি ছিল মিশর ইজারয়েলের শান্তি চুক্তি।

৩. গৃহীত সিদ্ধান্ত

(১) সম্মেলনের সদস্য ভুক্ত দেশগুলির মধ্যে আর্থিক ও প্রযুক্তিগত সহযোগিতা সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

(২) মার্কিন চাপে নত হয়ে মিশরও ইজরায়াল যেভাবে ক্যাম ডেভিড চুক্তি স্বাক্ষর করে তার নিন্দা করার প্রস্তাব গৃহীত হয়।

(৩) সম্মেলনে চূড়ান্ত ঘোষণা পত্র দ্বারা জোট নিরপেক্ষ আন্দোলনের উদ্দেশ্যে নীতি ও সদস্যপদ লাভের শর্তাবলী ঘোষিত হয়।

৪. গুরুত্ব

এই সম্মেলনের নির্জোট আন্দোলন ভুক্ত দেশগুলির অন্তর্বর্তী সমস্যা সমূহ শান্তিপূর্ণভাবে সমাধানের উপর গুরুত্ব দেয়া হয়। এছাড়াও সোভিয়েত বা মার্কিন কোন সামরিক জোটেরই অন্তর্ভুক্ত নয় এমন দেশগুলি নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে সুরক্ষিত করার ব্যাপারে অধিক গুরুত্ব আরোপ করা হয় এই সম্মেলনে।

« নতুন দিল্লি সম্মেলন

১. আয়োজন

ভারতের রাজধানী নতুন দিল্লিতে সপ্তম জোট নিরপেক্ষ সম্মেলনটি আয়োজিত হয়। এই সম্মেলন টি প্রথম বাগদাদে আজও তো হওয়ার সিদ্ধান্ত হলে ইরাক ও ইরান যুদ্ধের কারণে তা দিল্লিতে আয়োজিত হয়। ১৯৮৩ খ্রিস্টাব্দের ৭ মার্চ এই সম্মেলনে শুরু হয় আর তার শেষ হয় ১২ই মার্চ।

২. অংশগ্রহণকারী দেশ ও নেতৃত্ব

এই সম্মেলনে ৯৯টি দেশ যোগ দেয়। সম্মেলনের সভাপতিত্ব করেন ভারতের রাষ্ট্রপতি জৈল সিং। সম্মেলনের উপস্থিতি নেত্রী বর্গের মধ্যে ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী নির্জন আন্দোলনের উদ্দেশ্য ব্যাখ্যা করেন। শ্রীমতি গান্ধী বলেন যে নির্জোট আন্দোলনের মূল উদ্দেশ্য হলো বিশেষ শান্তি প্রতিষ্ঠা করা এবং উপনিবেশবাদের বিরোধিতা করা।

৩. গৃহীত সিদ্ধান্ত

এই সম্মেলনের গৃহীত সিদ্ধান্ত গুলি হল – (১) সার্বিক নিরস্তীয়করণ (২) উপনিবেশবাদের বিরোধী সংগ্রাম (৩) বিশ্ব মানচিত্রে দক্ষিণে দেশগুলির মধ্যে সহযোগিতা স্থাপন (৪) পাশ্চাত্য দুনিয়ার ক্রমবর্ধমান অর্থনৈতিক আগ্রাসন রোধ প্রকৃতি।

৪. গুরুত্ব

নতুন দিল্লি সম্মেলনে আর আমি কষ্ট উৎপাদন ও তা মজবুত করার বিরুদ্ধে প্রতিবাদী ভূমিকা গ্রহণের ওপর গুরুত্ব আরোপ করা হয়। এ ছাড়াই সম্মেলনের লাতিন আমেরিকার সমস্যা গুলি সমাধানের উপর যথেষ্ট গুরুত্ব দেয়া হয়।

« হারের সম্মেলন

১. আয়োজন

১৯৮৬ খ্রিস্টাব্দে এক সেপ্টেম্বর জিম্বাবোয়ের রাজধানী হারাতে আয়োজিত হয় অস্ত্র জোট নিরপেক্ষ সম্মেলন। এই সম্মেলনে চলে ৬ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত।

২. অংশগ্রহণকারী দেশ ও নেতৃত্ব

হারের সম্মেলন প্যালেস্টাইন সহ বিশ্বের ১০১ টি দেশে যোগ দেয়। জোট নিরপেক্ষ আন্দোলনের ২৫ বছরের পদার্পণকারী হাড়ের সম্মেলন সভাপতি করেন জিম্বাবোয়ের রাষ্ট্রপ্রধান রবার্ট মুগাবে। এই সম্মেলনে পর্যবেক্ষক দেশ হিসেবে ভেনেজুয়েলার্স অংশগ্রহণ করে। এছাড়াও অতিথি রাষ্ট্র হিসেবে এই সম্মেলনে উপস্থিত থাকে অস্ট্রেলিয়া, গ্রিস এবং মঙ্গোলিয়া।

৩. গৃহীত সিদ্ধান্ত

(১) ইরান-ইরাক যুদ্ধ, কাম্পুচিয়া এবং আফগানিস্তান সংকট প্রভৃতির সমাধানের পদক্ষেপ গ্রহণ।

(২) গ্যাট চুক্তি প্রশ্নের মুক্ত বাণিজ্যকে স্বাগত জানানো সিদ্ধান্ত নেওয়া হলে ওর ক্ষেত্রে পক্ষপাত মূলক ভূমিকার দৃষ্টি সম্পর্কে ও সচেতন থাকতে বলা হয়।

(৩) জোট নিরপেক্ষ আন্দোলনের মূল লক্ষ্য হিসেবে সাম্রাজ্যবাদ, উপনিবেশিকতাবাদ, নয়া উপনিবেশিকতাবাদ, বর্ণবিদ্বেষ ও জাতিবিদ্বেষ ী বিরুদ্ধে মিলিতভাবে প্রতিরোধের অঙ্গীকার গ্রহণ করা হয়।

৪. গুরুত্ব

হাড়ের সম্মেলনের মহাকাশযুদ্ধ বিষয়ক মার্কিন প্রশাসনের ক্রমবর্ধমান ভীতি প্রদর্শন বিষয়টির ওপর অধিক গুরুত্ব সহকারে আলোচনা করা হয়। এ ব্যাপারে মার্কিন ভিত্তিকে আগ্রহ করে শান্তি প্রতিষ্ঠার উদ্যোগকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার শপথ নেয়া হয়।

মন্তব্য

পঞ্চম জন নিরপেক্ষ সম্মেলনে অর্থাৎ কলম্বো সম্মেলনে ১৯৭৬ খ্রিস্টাব্দে থেকে শুরু করে হাড়ের সম্মেলন পর্যন্ত জোট নিরপেক্ষ আন্দোলনের তারা কার্যধারা ও আদর্শ অক্ষুন্ন রাখতে সক্ষম হয়। হাড়ের সম্মেলনে জোট নিরপেক্ষ আন্দোলনের ২৫ বছর পূর্তি হয়। এই উপলক্ষে হারে সম্মেলনের সূচনা এক ঘোষণা পত্র প্রকাশিত হয়। এই ঘোষণাপত্রে জোট নিরপেক্ষ আন্দোলনের মূল্যায়ন করা হয়, বলা হয় -সমগ্র বিশ্বের স্বাধীন উপাদান হিসেবে জোট নিরপেক্ষ দেশগুলির আন্দোলন হল শান্তি এবং পারস্পরিক বোঝাপড়ার ক্ষেত্রে এক অগ্রগণ্য আন্দোলন।

উচ্চমাধ্যমিক ইতিহাস বইয়ের সমস্ত প্রশ্নের উত্তর

Leave a Comment