ডাকাতের মা ছােটোগল্প অবলম্বনে ডাকাত-সর্দার সৌখীর চরিত্র | ডাকাতের মা গল্পে ন্যায়-অন্যায় বােধ | ডাকাতের মা গল্পে একটি ডাকাত পরিবারের কথা যেভাবে ফুটে উঠেছে

ডাকাতের মা গল্পে একটি ডাকাত পরিবারের কথা যেভাবে ফুটে উঠেছে তা আলােচনা করাে

সতীনাথ ভাদুড়ীর ‘ডাকাতের মা’ ছােটোগল্পে একটি ডাকাত পরিবারের কাহিনি অত্যন্ত বিশ্বাসযােগ্যতার সঙ্গে বর্ণিত হয়েছে।

সৌখীর মা আগে পরিচিত ছিল ডাকাতের বউ হিসেবে। সৌখীর ডাকাত বাবা মারা যাওয়ার পর বর্তমানে তার একমাত্র পরিচয় হয় ডাকাতের মা। পাঁচ বছর আগে সৌখী জেলে যাওয়ার পর তার অনুচরেরা প্রথম দুবছর ধরে প্রতি মাসে তার মাকে টাকা দিয়ে গেলেও তারপর থেকে আর তা দেয় না।

ডাকাতের বাড়ির সদস্য বলে সৌখীর মা বউকে কেউই বিশ্বাস করে পরিচারিকার কাজ দিতে চায় না। বাধ্য হয়ে তখন সৌখীর মা তার নাতিবউমাকে বেয়াই বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়।

সৌখীর মা ডাকাতি করাকে মােটেই ঘৃণ্য চোখে দেখে না। কারণ ‘ডাকাতি করা তার স্বামী-পুত্রের হকের পেশা’। বােঝা যায়, ডাকাত পরিবারের মূল্যবােধ ব্যাপারটাই সম্পূর্ণ আলাদা।

ডাকাত পরিবারের স্নেহ বাৎসল্যের ছবিও এই গল্পে বেশ স্পষ্ট। বাড়ির দরজায় কান পেতে সৌখীর নিজের ছেলের কণ্ঠস্বর শােনার চেষ্টা বা মাকে নিজের নতুন কম্বলটা দিয়ে নিজে মায়ের ছেঁড়া কম্বল নিয়ে শুয়ে পড়া, এমনকি সৌখীকে আলুচচ্চড়ি-ভাত খাওয়ানাের জন্য সৌখীর মা-এর লােটা চুরি করা-ইত্যাদি নানা ঘটনা থেকে ডাকাত পরিবারের পারস্পরিক মমত্ববােধের ছবি পাঠকের কাছে স্পষ্ট হয়ে ওঠে।

ডাকাতের মা গল্পে ন্যায়-অন্যায় বােধ যেভাবে আবর্তিত হয়েছে তা নিজের ভাষায় বুঝিয়ে লেখাে।

ডাকাতের মা গল্পে সতীনাথ ভাদুড়ী পাঠককে এক অদ্ভুত প্রশ্নের, সামনে হাজির করেন, যখন ডাকাতের মা বলেন, “ন্যায়-অন্যায় কর্তব্য-অকর্তব্যের পাট কি একেবারেই উঠে গেল দুনিয়া থেকে?” গল্পটিতে ন্যায়-অন্যায় এবং কর্তব্য-অকর্তব্য বিষয়টি বারেবারে আবর্তিত হয়েছে নানা দৃষ্টিকোণ থেকে।

প্রথমেই যদি আমরা এই বিষয়টিকে সৌখীর মায়ের দৃষ্টিকোণ থেকে দেখি, তাহলে এক বিশেষ দর্শন সেখানে ফুটে ওঠে। সৌখীর মা মনে করে না যে ডাকাতি কোনাে একটা অন্যায় কাজ। বরং সৌখী ডাকাতি করে ধরা পড়লে, জেলে থাকার সময় দলের লােক যে টাকা দিতে আসে না, সেটাই তার কাছে অন্যায়, অকর্তব্যবােধের নিদর্শন।

মায়ের এই মনােভাব সৌখীর মধ্যেও আছে পুরােমাত্রায়। সৌখী জেলে থাকাকালীন কথাই বলে না চোরদের সঙ্গে। সেই সৌখীকেই অবশ্য শেষমেষ মাথা পেতে নিয়ে হয় সামান্য লােটা চুরির কলঙ্ককে।

অপরাধের সঙ্গে যুক্ত পরিবারটির মধ্যেও রয়েছে মাতৃত্বের বন্ধন, মায়ের প্রতি পুত্রের কর্তব্যবােধসেটাই যেন লেখকের অভীষ্ট। ডাকাতি নিঃসন্দেহে অন্যায়, আর অন্যায়কারীর পটভূমিকাতেই আবর্তিত হয় ন্যায়-অন্যায়ের সূক্ষ্মবােধ। কর্তব্যের জন্য ন্যায়ের বদলে কীভাবে অন্যায় সংঘটিত হয়, তাও যুক্ত হয়েছে ওই আবর্তে।

ডাকাতের মা ছােটোগল্প অবলম্বনে ডাকাত-সর্দার সৌখীর চরিত্র আলােচনা করাে।

সতীনাথ ভাদুড়ীর ‘ডাকাতের মা’ ছােটোগল্পের ডাকাত সর্দার সৌখীর যেসব বৈশিষ্ট্য ফুটে উঠেছে, সেগুলি হল-

আত্মমর্যাদাবােধ: অত্যন্ত আত্মমর্যাদাসম্পন্ন ডাকাত ছিল সৌখী। তাই জেলে থাকার সময় কখনও সে ছিচকে চোরদের সঙ্গে পারতপক্ষে কথা বলেনি, ডাকাত বা যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের আসামীরাই তার মতে তার সমকক্ষ ছিল।

মেজাজি: সৌখী অত্যন্ত মেজাজি পুরুষ ছিল বলেই টোকার শব্দে তার মার ঘুম ঠিক সময়মতাে না ভাঙার জন্য মাকে বেদম প্রহার করে সে। সৌখীর মা তাই বলেছে, ‘বাপের বেটা, তাই মেজাজ অমন কড়া।’

সাবধানী: ঝুঁকিপূর্ণ পেশায় নিয়ােজিত থাকার জন্য অত্যন্ত সাবধানে থাকতে হত সৌখীকে। দরজা খােলার আগেও মাকে বলেছিল দশ বার নিঃশ্বাস ফেলার সময় পর্যন্ত অপেক্ষা করার। এ ছাড়া, দলের লােকদের বিশ্বাসঘাতকতা থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য সে বারবার তার সংকেত পালটে দিত।

ধূর্ত এবং কুশলী: বাস্তববুদ্ধির অধিকারী ছিল বলেই সৌখী জমাদারকে ঘুষ দিয়ে নিজের জেল-জীবনের মেয়াদ কমিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছিল।

মাতৃভক্তি: একবার মাকে বেদম প্রহার করে ফেললেও সৌখীর মধ্যে যথেষ্ট পরিমাণেই মাতৃভক্তি ছিল। জেল থেকে বাড়ি ফিরে এসে রাতে যখন সে মার গায়ে পুরােনাে ছেঁড়া কম্বল দেখে, তখন জোর করেই তার গায়ের নতুন কম্বলটা মাকে দিয়ে দেয়।

অর্থাৎ সব দিক বিচার করে বলা যায় যে, ডাকাত সর্দার সৌখী ছিল দোষে-গুণে মেশানাে এক রক্তমাংসের মানুষ।

‘ডাকাতের মা’ গল্পে সৌখীর বাড়ির চৌহদ্দির মধ্যে প্রবেশ করা থেকে শুরু করে ঘরে ঢােকা অবধি সময়কালের বিস্তৃত বর্ণনা দাও।

সতীনাথ ভাদুড়ীর ডাকাতের মা ছােটোগল্পে দেখা যায়, সৌখী শেষবার জেলে যাওয়ার পাঁচ বছর পর এক শীতের রাতে যখন তার মা বিছানায় শুয়ে নানা কথা ভাবছিল, তখনই নিজের বাড়িতে ঢােকে জেল-ফেরত সৌখী। শুয়ে শুয়ে কম্বলটার বয়সের কথা চিন্তা করতে করতে হঠাই দরজায় টকটক করে টোকা পড়ার শব্দকে প্রাথমিকভাবে টিকটিকির ডাক বলে মনে হয় সৌখীর মায়ের। টিকটিকিটা পর্যন্ত যেন দুর্দিনে মশকরা করছে তার সঙ্গে বার সে দুটো টোকার শব্দ শুনতে পেলে বুঝতে পারে যে, আগেরটা টিকটিকির আওয়াজ ছিল না। কেন না, টিনের পাল্লায় টোকা মারলে যেরকম খন্খনে শব্দ হয়, শব্দটা তেমনি। সে ভাবল, এতদিনে হয়তাে সৌখীর দলের লােকদের তার কথা মনে পড়েছে। একইরকম টোকা তৃতীয়বারের জন্য হওয়ায় বৃদ্ধার আর সংশয় রইল না। তবে পুরোপুরি নিশ্চিন্ত হওয়ার জন্য সে আস্তে আস্তে উঠে বন্ধ দরজার সামনে গিয়ে উপস্থিত হয়। আর দরজার ফাক দিয়ে -বাইরে-দাঁড়িয়ে থাকা লােকটাকে দেখার চেষ্টা করে। কিন্তু সে কিছু দেখতে পায় না, শুধু বিড়ির গন্ধ পায়। এর ঠিক পরেই আবার দুটো টোকা পড়ে দরজায়। তাড়াতাড়ি ছেলের নির্দেশমতাে দশবার শ্বাস ফেলে দরজা খুলে সে দেখে, তার সামনে দাঁড়িয়ে আছে এক বড়ােসড়াে চেহারার মানুষ তার ছেলে সৌখী।

বাংলা সব প্রশ্ন উত্তর (একাদশ শ্রেণি)

Leave a Comment