ইংরেজিদের সঙ্গে টিপু সুলতানার সম্পর্ক লেখ ?

ইংরেজদের সঙ্গে টিপু সুলতানের সম্পর্ক

টিপু সুলতান ছিলেন মহীশুরের স্বাধীন সুলতানির প্রতিষ্ঠাতা হায়দার আলীর পুত্র। মহীশুরের বাঘ নামে পরিচিত এই শাসকটি জন্মভূমি রক্ষার জন্য নিজেও তরবারি হাতে যুদ্ধক্ষেত্রে বীরের মতো প্রাণ দিয়েছিলেন।

বৈরিতার মনোভাব

মহীশুরের শার্দূল টিপু ছিলেন ইংরেজ ঘোরতর শত্রু। সমসাময়িক ভারতবর্ষে তার মতো ব্রিটিশের ভয়ংকর তম শত্রু সম্ভবত আর কেউ ছিলেন না। দক্ষিণ ভারতের ব্রিটিশের সম্প্রসারণ প্রতিরোধে লৌহসম যিনি রুখে দাঁড়ান দক্ষিণ ভারতে ইংরেজ শক্তিকে বিলুপ্ত করে কেবল নিজেও শক্তির ওপর নির্ভর করে না তিনি ইংরেজের শত্রু ফ্রান্সের সম্রাট ও তুরস্কের সুলতান এর কাছে ও সামরিক সাহায্যের আবেদন জানায়।

ইঙ্গ মহীশূর যুদ্ধ

ম্যাঙ্গালোরের সন্ধি দ্বিতীয় অলিঙ্গ মহীশূর যুদ্ধের স্থানীয়নিষ্পত্তি ঘটাতে ব্যর্থ হন। আসলে এই সন্ধি ছিল নতুন এক যুদ্ধ শুরুর মাঝে সাময়িক বিরতি মাত্র। টিপু সুলতান বলেছিলেন যে ক্ষমতায় লোভেই ইংরেজরা মহীশূর দখল করার চেষ্টা করবে। গোপনে কনস্টান্টটিনোপল, কাবুল, মরিশাস প্রভৃতি দেশের সঙ্গে সামরিক সাহায্যের জন্য যোগাযোগ রাখেন এবং ফরাসি সম্রাট তুরস্কের সুলতানের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তোলেন।

১. তৃতীয় যুদ্ধ

লিঙ্গ ফরাসি দ্বন্দ্বের সময় ইংরেজ নিজামের কাছে যে শক্তি সংঘ গঠনের প্রস্তাব পাঠায় তা থেকে টিপুকে বাদ রাখে। টিবু কে এই জোটের বাইরে রাখা এটিপু অত্যন্ত মর্মাহত হয় এবং ক্ষুব্ধ হয়ে ব্রিটিশ অধীনস্থ রাজ্য ত্রিবাঙ্কুর আক্রমণ করেন ১৭৯০ খ্রিস্টাব্দে। কর্ন‌ওয়ালিশ নিজাম ও মারাঠাদের সঙ্গে মিলিত হয়ে ত্রিশক্তি জোট গঠন করেন। এই শক্তি জোটের সঙ্গে টিফুর তৃতীয় ইঙ্গ মহীশূর যুদ্ধ শুরু হয়। এই যুদ্ধে পরাজিত হয়ে টিপু ইংরেজদের সঙ্গে শ্রীরঙ্গপত্তমের সন্ধি ১৭৯২ খ্রিস্টাব্দের স্বাক্ষর করেন, যার ফলে মহিশূর রাজ্য দুর্বল হয়ে পড়ে। যুদ্ধের ক্ষতিপূর্ণ বাবদ টিপু তিন কোটি ৩০ লক্ষ টাকা ও তার দুই পুত্রকে কোম্পানির কাছে জামানি হিসেবে রাখতে বাধ্য হন।

সন্ধ্যের শর্ত সমূহ

শ্রীরঙ্গপত্তমের সন্ধির মাধ্যমে তৃতীয় ইঙ্গ মহীশূর যুদ্ধের অবদান ঘটে। সন্ধির ফলে মহীশূর রাজ্যের আর্ধাংশ ত্রিপুর হস্ত চুক্তি হয়। এই চুক্তি অনুযায়ী-

(১) মারাঠা ওয়ার্ধা থেকে কৃষ্ণ পর্যন্ত বিস্তীর্ণ অঞ্চল লাভ করে।

(২) গুটি ও ফউদআপ্পআ সহজ ব্যানার নদী থেকে কৃষ্ণা নদী পর্যন্ত অঞ্চল নিজাম যায়।

(৩) দিন্দিগুলি, বরাহমহল, কুর্গ, মালাবার, মাদুরা ও সালেম ইংরেজদের হস্তগত হয়।

(৪) এছাড়া ছাড়া ক্ষতিপূরণ হিসেবে টিপুকে নগদ ৩ কোটি ৩০ লক্ষ টাকা ইংরেজদের দিতে হয়।

(৫) সর্বোপরি, সন্ধির শর্ত পালনের নিশ্চয়তা স্বরূপ তার দুই পুত্রকে ইংরেজদের হাতে অর্পণ করতে টিপু বাধ্য হন।

(৬) উভয়পক্ষে একে অপরকে যুদ্ধবন্দি প্রত্যপর্ণ করে।

গুরুত্ব

শ্রীরঙ্গপত্তমের সন্ধি স্বাক্ষরের ফলে টিপুর পত নিশ্চিত হয়ে ওঠে। সন্ধ্যের শর্তানুযায়ী রাজ্যের অর্ধেকটা হারিয়ে এবং বিপুল ক্ষতিপূরণের বোঝা নিয়ে তিপুর পক্ষে পুনরায় ঘুরে দাঁড়ানো কঠিন হয়ে পড়ে। এছাড়াও ব্রিটিশ-মারাঠ-নিজাম শক্তি জোট মহীশুরকে ঘিরে ফেলায় নিরাপত্তা বিপন্ন হয়। বরাহমহল, কুর্গ, মালবার প্রভৃতি অঞ্চল গুলির ব্রিটিশের অধীনে চলে যাওয়ার পূর্ব ও পশ্চিম দিক অরক্ষিত হয়ে পড়ে দিন্দিগুল দোয়াব-সহ কৃষি সমৃদ্ধ অঞ্চলগুলি হাতছাড়া হয়ে যাওয়ায় রাজ্যের আর্থিক বিকাশ রুদ্ধ হয়। তাই মহিবুল হাসান বলেছেন- “শ্রীরঙ্গপত্তমের সন্ধি বাস্তবে ওয়েলেসলি কর্তৃক টিপুর চূড়ান্ত পতনের ক্ষেত্রে প্রস্তুত করেছিল।”

২. চতুর্থ যুদ্ধ

২৭৯৯ খ্রিস্টাব্দে ওয়েলেসলি টিপুকে এক চরমপত্র পাঠিয়ে অধীনতামূলক মিত্রতা নীতির চুক্তিতে স্বাক্ষরে নির্দেশন দেন। টিপু এই চুক্তি ঘৃণা ভরে প্রত্যাখ্যান করলেও ওয়েলসলির নেতৃত্বে ইংরেজ, মারাঠা ও নিজামের জোট মহিশুর আক্রমণ করে, শুরু হয় চতুর্থ ইঙ্গ মহীশূর যুদ্ধ। সদাশের ও মলভেরির যুদ্ধে পরাজিত হয়ে টিপুদা রাজধানী শ্রীরঙ্গপত্তমের আশ্রয় নেন। শত্রুপক্ষকে রাজধানীর অবরোধ করলে সংঘর্ষে টিপু নিহত হন।

উপসংহার

টিপু সুলতান আজীবন বিদেশী শক্তির বিরুদ্ধে অপসহীন সংগ্রাম চালিয়ে গিয়েছেন। যদিও শেষ পর্যন্ত তিনি ব্যর্থ হয়েছিলেন, তবুও তার ব্রিটিশ বিরোধী সংগ্রাম দেশবাসীকে বিশেষ পরিবর্তন প্রজন্মকে জাতীয়তাবাদের উদ্বুদ্ধ করে তুলেছিল। সে সময় ভারতীয় রাজনীতিতে দেশীয় শক্তি গুলি একে অপরের সঙ্গে বিবাদ ও গৃহযুদ্ধে লিপ্ত ছিল, সে সময় টিপু বিদেশি ইংরেজদের সঙ্গে সংগ্রামী এক মহান দেশপ্রেমী শাসকের পরিচয় দেন।

উচ্চমাধ্যমিক ইতিহাস বইয়ের সমস্ত প্রশ্নের উত্তর

Leave a Comment