কর্তার সিং দুগ্গাল রচিত ‘অলৌকিক’ গল্পে উদ্ধৃত অংশের পরিচয় পাওয়া যায়।
মুখে কথা না থাকার কারণ
গুরু নানক পাঞ্জা সাহেবের শিষ্য মর্দানার দেশটা মিটিয়ে প্রাণ বাঁচায়। সেই শহরে তাই পরার্থপরতার জ্বলন্ত দৃষ্টান্ত। এই শহরবাসীরা কানে একদিন এক আশ্চর্য ও বার্তা এসে পৌঁছালো। দূরের শহরে ফিরিঙ্গিরা নিরস্ত ভারতীয়দের উপর গুলি করেছে। আবাল বৃদ্ধবৃদ্ধবনিতা সবাই আছে মৃতদের মধ্যে। বাকিদের অন্য শহরের জেলে পাঠানো হচ্ছে। কয় দিনের ক্ষিদে-তেস্টায় মৃতবৎ হলেও, হুকুম হয়েছে ট্রেন কোথাও থামবে না। পাঞ্জা সাহেবের লোকেরা এই খবরে উত্তেজিত হয়। তাদের শহরে যে অপরের কল্যাণে আত্মনিবেদিত। স্টেশন মাস্টারকে অনেক আবেদন নিবেদন করা হলো। টেলিফোন, টেলিগ্রাম গেল। কিন্তু ফিরিঙ্গিদের হুকুম বদল হলো না। ট্রেনের মধ্যে স্বাধীনতা সংগ্রামীরা খিদে-তেস্টায় কাতর। পাঞ্জা সাহেবের লোকজন ও ট্রেন থামাতে বদ্ধপরিকর হলো।
নির্দিষ্ট দিনের স্টেশন শহরবাসী ডাঁই করে রাখল রুটি, পায়েস, লুচি, ডাল। কিন্তু স্টেশনের উপর দিয়ে ট্রেন না থেমে ঝড়ের বেগে বেরিয়ে যাবে। পরবর্তী অলৌকিক ঘটনাটির কথক শুনেছে মায়ের বান্ধবীর মুখে। তার ঘটনা বর্ণনায় পাওয়া যায়-
রেললাইনে আমার ছেলেপুলের বাবা ও তারপর ওর সঙ্গীরা শুয়ে পড়লেন। ওদের পিছনে তাদের বউ বাচ্চারা। তীক্ষ্ণ হুইসেল দিতে দিতে ট্রেন এলো। গতি আগেই কমিয়েছে। কিন্তু থামলো অনেক দূরে এসে। দেখি চাকা পার হয়েছে ওর আর বন্ধুদের বুকের ওপর দিয়ে। ট্রেন থেমেছে আমার মাথার কাছে। পাশে শুয়ে থাকা সবার মুখে “জয় নিরঙ্কার” ধবনি। টেনে পিছনে থাকলে লাশগুলো কেটে দুমড়েমুছরে গেল। খালপাড়ে সেতুটির দিকে রক্তের স্রোত। এই গল্পই কথকের চোখে জল এনেছে।
গল্পকথক তার মায়ের এক বান্ধবীর মুখে পাঞ্জা সাহেবের মানুষের নিঃস্বার্থ আত্ম বিসর্জনের কথা শুনে বিস্ময়াভিভূত হয়ে বাকরুদ্ধ হন।
দ্বাদশ শ্রেণির বাংলা সমস্ত অধ্যায় অনুযায়ী তার সব প্রশ্নের উত্তর